রবিবার, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫
রবিবার, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫

অদম্য মেধাবী শারমিন এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে!

নিউজ ডেস্ক:

প্রত্যেক মানুষের জীবনে অনেক ছোট ছোট স্বপ্ন থাকে। আর সেই ছোট স্বপ্নগুলো একদিন বড় স্বপ্নে পরিণত হয়ে হাতছানি দেয় অপার সম্ভাবনার। এমনই এক নজির স্থাপন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ঢাকার দোহার উপজেলার উত্তর জয়পাড়া গ্রামের পান্নু বেপারির মেয়ে শারমিন আক্তার। তিনি নানা প্রতিবন্ধকতা দূরে ঠেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১৭৯তম স্থান অর্জন করে সবাইকে রীতিমতো অবাক করে দিয়েছেন।
বর্তমান সমাজব্যবস্থায় যেখানে নামীদামি কোচিং সেন্টারে ভর্তি না হলে ভালো ফল করা যায় না- প্রচলিত এমন ধ্যানধারণাকে পাল্টে দিয়ে শারমিন অনন্য নজির স্থাপন করায় আনন্দিত তার এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, সহপাঠী ও তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক। হতদরিদ্র পরিবারে জন্মেও নিজের সদিচ্ছা আর সবার সহযোগিতায় সব বাধা অতিক্রম করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান করে নেয়া শারমিন এখন স্বপ্ন দেখেন সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার। এ সাফল্যে গর্বিত শারমিনের বাবা-মা। তারা সব কিছু না বুঝলেও এটা বুঝতেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। তাই মেয়ের এমন সাফল্যে খুশিতে আত্মহারা। শারমিনের মতো তার বাবা-মাও আশায় বুক বেঁধেছেন সুন্দর জীবন গড়ার।
বর্তমানে শারমিনের বাবা পান্নু বেপারি ভাড়াবাড়িতে বসবাস করছেন। দিনমজুরের কাজ করে যা পান তা দিয়ে স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে কোনোরকমে সংসার চালাচ্ছেন। সংসার খরচের পর পড়ালেখার জন্য টাকা জোগাড় করা দুরূহ ব্যাপার। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বারবার। শারমিনের পড়ার জন্য ছিল না কোনো ভালো পরিবেশ। ছিল না পড়ার টেবিলসহ বাড়তি কোনো সুবিধা। একটি কুঁড়েঘরে পরিবারের সবার বসবাস। সব প্রতিবন্ধকতা পেছনে ফেলে ২০১৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় শারমিন বেগম আয়েশা উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৫ ও এইচএসসি পরীক্ষায় জয়পাড়া কলেজ থেকে জিপিএ ৫ অর্জন করেন।
প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে শারমিনের বাবা পান্নু বেপারি ক্ষীণকণ্ঠে বলেন, মেয়ের শখ-আহ্লাদ দূরে থাক, লেখাপড়ার জন্য যেসব উপকরণ প্রয়োজন তাও সময়মতো দিতে পারিনি। ভালো খাবারও দিতে পারিনি। এত সব সমস্যা সত্ত্বেও ভালো ফল করায় আমি খুবই আনন্দিত। আর এসব কারণে বারবার পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কিন্তু অনেকে আমাকে সাহস জুগিয়েছেন পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার।

মা রাফেজা আক্তার বলেন, সংসার চালাতে হিমশিম ক্ষেতে হয়েছে, এ কারণে মেয়ের পড়ালেখা চালানো ছিল খুবই কষ্টকর। অনেকে সারা বছর প্রাইভেট পড়লেও ওকে টাকা-পয়সার অভাবে কখনো প্রাইভেট পড়াতে পারিনি।

এ বিষয়ে শারমিন জানান, ‘আমার বাবা-মা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। তারা বরাবরই আমার পড়ালেখার ব্যাপারে খুবই যত্নবান ছিলেন। কিন্তু আর্থিক দৈন্যের কারণে হিমশিম খেতে হয়েছে। আমি নবম শ্রেণীতে থাকাকালীন আমার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল। সেই সময় আমার শ্রদ্ধেয় স্যার ডা: আব্দুল্লাহ আল মামুন আমার পড়াশোনার ব্যাপারে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। তার অসামান্য অবদানের জন্য আমি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি।’

শারমিন জানান, তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে মানবতার সেবায় আত্মনিয়োগ করবেন। তার আয়ের একটি অংশ তুলে দেবেন সমাজের অবহেলিত ও অনাথ শিশুদের হাতে।
বর্তমানে শারমিনের উচ্চশিক্ষার জন্য মাসিক যে খরচ, তারও জোগাড় নেই। তার পরও সবার সহযোগিতা থাকলে আর কোনো প্রতিবন্ধকতাই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না, এমন বিশ্বাস শারমিনের।

Similar Articles

Advertismentspot_img

Most Popular