নিউজ ডেস্ক:
বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বা অঙ্গভঙ্গি দেখে বোঝা যায় চারপাশের মানুষগুলো আপনার সঙ্গে কেমন আচরণ করছে। এ ব্যাপারে ইউএলসিএ এর প্রফেসর অ্যালবার্ট মেহরাবিন বলেন, আপনার মনে যা আছে তার ৫৫ শতাংশ বোঝা যায় অঙ্গভঙ্গি থেকে, ৩৮ শতাংশের প্রকাশ পায় কণ্ঠ থেকে এবং ৭ শতাংশ বোঝা যায় ভাষার ব্যবহারে। তবে আসুন জেনে নেই, অঙ্গভঙ্গি দেখে মানুষের মন বোঝার কৌশল।
১. মেকি হাসি বুঝতে চোখে তাকান
আন্তরিক হাসিতে চোখের নিচে কুঞ্চিত হয়। আর লোক দেখানো মেকি হাসির সময় চোখের নিচে কোনো ভাঁজ পড়ে না। কাজেই কেউ আপনাকে দেখে হাসলে চোখের ভাব দেখে বুঝবেন তিনি সত্যিই হাসছেন কিনা।
২. ভ্রু ওপরের দিকে ওঠানো অস্বস্তির লক্ষণ
চোখের ওপরের ভ্রু আমরা প্রায়ই ওপরের দিকে তুলি। সাধারণত দুশ্চিন্তা, চমক, অস্বস্তি এবং ভয়ের কারণে মানুষ এমন করে।
৩. কণ্ঠের ওঠা-নামায় আগ্রহের প্রকাশ
কেউ কথা বলার সময় কণ্ঠ থেকে হঠাৎ জোরে বা আস্তে শব্দ বেরুলে বুঝতে হবে বিষয়টি নিয়ে তিনি আগ্রহী। সাইকোলজি টুডে এক প্রতিবেদনে জানায়, আগ্রহের উদ্রেক করে এমন বিষয় উত্থাপন হলে মেয়েদের কণ্ঠ আরো তীক্ষ্ণ এবং ছেলেদের কণ্ঠ কিছুটা নিচু হয়ে আসে।
৪. দুজন দুজনের আয়না হয়ে ওঠেন
দুজন মানুষ মনোযোগের সঙ্গে কথা বলতে থাকলে তাদের একজনের আচরণ অন্যজন অনুকরণ করেন। যেমন- কথা বলতে বলতে বন্ধু তার পায়ের ওপর পা রাখলে আপনিও পায়ের ওপর পা রাখবেন। এর অর্থ আপনাদের মধ্যে আন্তযোগাযোগ তৈরি হয়েছে, জানান পজিটিভ সাইকোলজিস্ট বারবারা ফ্রেডরিকসন।
৫. ইতিবাচক-নেতিবাচক দুই-ই বোঝায় চোখে চোখ রাখা
কারো চোখে চোখ রাখলে দেহে তার উত্তেজনা ছড়িয়ে যায়। তবে তা ইতিবাচক না নেতিবাচক তা নির্ভর করে পরিস্থিতি এবং যারা চোখে চোখ রাখছেন তাদের ওপর। এ কথা বলেন ক্লেয়ারমন্ট ম্যাককেনা কলেজের ওর্গানাইজেশনাল সাইকোলজিস্ট রোনাল্ড ই রিজিও। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী পরস্পরের চোখে চোখ রাখার অর্থ ভয় ও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া। আবার প্রেমিক-প্রেমিকার চোখে চোখ রাখার অর্থ ভালোবাসার আদান-প্রদান।
৬. অতিরিক্ত সময় চোখে চোখ রাখা মিথ্যার লক্ষণ
মিথ্যা বলার সময় সাধারণত মানুষ চোখে চোখ রাখে না। কিন্তু কিছু মিথ্যাবদী রয়েছেন যারা এ কাজটি করতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে তারা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় ধরে চোখে তাকিয়ে থাকেন। এ সময় তাদের চোখের পলক পড়ে না।
৭. বিশেষ ভঙ্গিমা শক্তি ও অর্জনের প্রকাশ
প্রতিযোগিতায় বড় কোনো বিজয়ের পর জয়ী কেমন ভঙ্গিতে তার বিজয় গৌরব প্রকাশ করেন? এ ধরনের ভঙ্গিমায় দেহে টেসস্টোরেনের মাত্রা বেড়ে যায় এবং তা আত্মবিশ্বাস বাড়ায় বলে জানান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর অ্যামি কাডি। এভাবে দুই হাত উঁচু করে বিজয়ের আনন্দ প্রকাশ করা শক্তি ও অর্জনের প্রতীক।
৮. ক্রস করে পা রাখা প্রতিরোধ ও মতের অমিলের প্রকাশ
‘হাউ টু রিড আ পারসনস লাইক আ বুক’ এর লেখক গেরার্ড আই নিয়েরেনবার্গ এবং হেনরি এইচ ক্যালেরো জানান, ‘ক্রস লেগ’ হলো একমতে না পৌঁছানো এবং প্রতিরোধের লক্ষণ। এর অর্থ মানুষটি মানসিক, আবেগ এবং দৈহিকভাবে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন।
৯. বিশেষ অঙ্গভঙ্গি আন্তযোগাযোগের লক্ষণ
আকর্ষণ কোনো বিশেষ সংকেতের মাধ্যমে প্রকাশ পায় না। বরং ধারাবাহিক কয়েকটি অঙ্গভঙ্গি দিয়ে প্রকাশ পায়। নিউরোসাইকোলজিস্ট মার্শা লুকাস বলেন, কোনো নারী প্রথমে আপনার চোখে চোখ রাখলো এবং পরক্ষণেই নিচে তাকালো। এর পর চুলে হাত চালিয়ে আবার মাথা তুলে চোখে তাকালো। এ ধরনের অঙ্গভঙ্গির অর্থ তিনি আপনার প্রতি আকর্ষিত হয়েছেন।
১০. আপনার সঙ্গে হাসছেন মানে তিনি ইতিবাচক
কেউ আপনার হাসিতে নিজেও হেসে লুটোপুটি খাচ্ছেন। এর অর্থ তিনি আপনার প্রতি আগ্রহী। এভোলুশনারি সাইকোলজিস্টরা বলেন, মানুষের মানবিক সম্পর্কের উন্নয়নে হাসি অন্যতম সেরা ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি পারস্পরিক আন্তরিকতা এবং সম্পর্ক স্থাপনের ইচ্ছা শক্তি প্রকাশ পায় হাসির মাধ্যমে।
১১. দৃঢ় মুখ, শক্ত ঘাড় এবং কুঞ্চিত কপাল বিষণ্নতার লক্ষণ
মস্তিষ্কে ঘটে যাওয়া ঘটনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে চেহারায়। এফবিআই কাউন্টারইন্টেলিজেন্সের সাবেক এজেন্ট জো রাভারো জানান, আবেগ, হুমকির প্রতিক্রিয়া এবং বাঁচার জন্যে লড়াইয়ের মানসিকতা তৈরি আমাদের লিম্বিক সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কেউ মানসিক চাপে থাকলে তর মুখ দৃঢ় হয়ে থাকে, তার কপার থাকে কুঞ্চিত। এ সবই বিষণ্নতায় ভোগা বা মানসিক চাপে থাকার লক্ষণ।
১২. কর্তৃত্বসুলভ আচরণে নেতৃত্বের প্রকাশ
যখন মানুষ নিজেদের কোনো দলের বা পক্ষের নেতা হিসেবে ভাবতে শুরু করেন বা নেতার আসনে বসেন, তখন তিনি তার আচরণে নেতার ভাব প্রকাশ করেন। তাদের লক্ষ্যণীয় অঙ্গভঙ্গি, অকপটে কথা বলা, হাত উঁচিয়ে বা বিশেষ ভঙ্গিতে কিছু বলা ইত্যাদি দিয়ে তাদের কর্তৃত্ব প্রকাশ পায়।
১৩. কম্পনশীল মনের প্রকাশ ঘটে পা কাঁপার মাধ্যমে
ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটসের প্রফেসর সুসান হুইটবর্ন বলেন, দেহের সবচেয়ে বড় অংশটি হলো আপনার পা। মনে অতিমাত্রায় দুশ্চিন্তা, অস্বস্তি এবং ভয় থাকলে পা কাঁপতে পারে।