নিউজ ডেস্ক:
পর্যায়ক্রমে দেশের এক কোটি ব্যবসায়ীকে করজালের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। নতুন আয়কর আইনের আওতায় কর কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা শূন্যে নামিয়ে ব্যবসার খরচ কমানো কথা জানালেন এনবিআর সদস্য ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন।
অন্যদিকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে এনবিআরকে পুলিশ ম্যান থিওরি প্রয়োগ না করে পারস্পরিক আস্থা ও সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দিলেন বক্তারা।
গত শনিবার চট্টগ্রাম নগরীর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে এনবিআর আয়োজিত ‘নতুন আয়কর আইন : জনপ্রত্যাশা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এ কথা উঠে এসেছে।
সভায় জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আদর্শ কর ব্যবস্থায় ট্যাক্স ডিপেনিং হয় না, করজাল বিস্তৃত হয়। আমরা সেটা করব। কর এবং জিডিপির অনুপাত হতাশাজনক। যে আইনে সরকার রাজস্ব আহরণ করে, সেগুলো যুগোপযোগী করার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। লিগ্যাল রিফর্ম (আইনি সংস্কার) খুব চ্যালেঞ্জিং একটা কাজ। কারণ এতে প্রশাসনিক ব্যবস্থাও ঢেলে সাজাতে হয়।
তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য যেভাবে পরিচালিত হয় সেটাকে আইন অনুসরণ করবে, ব্যবসা পদ্ধতি আইনকে অনুসরণ করবে না। নতুন আইনে আমরা কর কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা শূন্যে নামিয়ে আনব, ব্যবসার খরচও যাতে কমে আসে সে বিষয়টিও বিবেচনায় আছে। আমাদের পর্যায়ক্রমে এক কোটি ব্যবসায়ীকে করজালের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
সভায় নতুন আইনকে সহজ ও করজাল সম্প্রসারণ করা এবং দৈবচয়নের নামে হয়রানি বন্ধ করতে এনবিআরকে তাগিদ দিয়েছেন আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, আইনজীবীরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সেলিম উদ্দিন বলেন, যেকোনো আইন করার ক্ষেত্রে কনসেপচুয়াল ফ্রেমওয়ার্ক থাকতে হবে। তবেই লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হয়। টপ লাইন ঠিক না করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বটম লাইনে ট্যাক্স নেওয়া উচিত না। এজন্য ট্যাক্স আদায় বাড়াতে ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তাদের সঙ্গে পারস্পরিক আস্থার সম্পর্ক বাড়াতে হবে এনবিআরকে।
আলোচনায় চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বর্তমান আইনটি ব্রিটিশ আমলের। ১৯২২ সালের আয়কর আইন ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ছিল। সেটি এখন অধ্যাদেশ থেকে আইনে পরিণত হওয়া সময়ের দাবি। আয়কর আইনে যেসব হয়রানি, সেটা দূর করতে হবে নতুন আইনে। মনে রাখতে হবে আমরা কেউ কারো প্রতিপক্ষ নই।
তিনি বলেন, দেশে তিন কোটি ব্যবসায়ী আছেন, যার মধ্যে ট্যাক্স রিটার্ন দেন মাত্র ১২ লাখ ব্যবসায়ী। উচ্চ করহার বজায় রাখা মানে এই, যে ব্যবসায়ী একবার আয়কর দিতে গিয়ে নাম লিখিয়েছে, তাকে বার বার ক্ষতিগ্রস্ত করা। তাই আয়কর দাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের সিটি মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন, এনবিআর সদস্য (আয়কর নীতি) ইকবাল পারভেজ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুর রউফ, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার শংকর রঞ্জন সাহা, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার প্রমুখ।