আলমডাঙ্গার গোপালনগর-পাঁচকমলাপুরসহ জেলাজুড়ে সাপ আতঙ্ক : ওঝার ঝাঁড়ফুক
আফজালুল হক: চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলার গোপালনগর-পাঁচকমলাপুর এলাকায় দুইদিন ধরে চলছে সাপ আতঙ্ক। এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর পর আবার ওই একই সাপের কামড়ে নারী ও শিশুসহ ১৩ জন আহত হলে আতঙ্ক রুপ নেয় অজানা ভয়ে। এই অঞ্চল যেই যাচ্ছে একবার হলেও নিজের পা ও আশপাশ দেখে চলাচল করছেন সাপের ভয়ে। গতকাল সন্ধ্যার পর রাত আনুমানিক সাতটা সাড়ে সাতটার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার গাংনী ইউনিয়নের গোপালনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে, সাপের কামড়ে আহতদের হাসপাতালে ভর্তি না করিয়ে, ঘরে আটকে রেখে পাঁচকমলাপুরের সাবেক ইউপি সদস্য ভন্ড কবিরাজ তুহিন ঝাঁড়ফুক করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এলাকাবাসী কালনাগিন খ্যাত সাপটিকে জীবিত ধরতে সক্ষম হয়েছে। তবে এই ঘটনায় পুরো জেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে সাপ আতঙ্ক। সাপের আহত ১৩ জনের মধ্যে শুধুমাত্র একজন নারী গতকাল রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়।
সাপের কাড়ড়ে নিহত স্কুলছাত্রী দিপালী (১৪) আলমডাঙ্গা উপজেলার গাংনী ইউনিয়মের গোপালনগর গ্রামের রকিবুল ইসলামের কন্যা ও স্থানীয় একটি স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী।
একই সাপের কামড়ে আহতরা হলেন, নিহত স্কুলছাত্রীর মা রতœা খাতুন (৩৫), খালা রেখা (৪৫), ফুফু আলমিনা (২৭), একই এলাকার শাহাবুলের কন্যা উম্মে ফাতেমা (১১), সাইফুলের ছেলে মুস্তাকিন (১১), বিল্লালের মেয়ে স্মৃতি (১২), মজিবুলের রুমা (১৪), বিল্লালের স্ত্রী বিউটি খাতুন (৩০), সাইফুলের স্ত্রী রিজিয়া (৩০) ও শিউলী (৩৪), শ্যামলী (২২), সাদিয়া (১৬)।
এছাড়া জেলার দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর গ্রামের পূর্বপাড়ার জামান আলীর ছেলে উজ্জ্বল হোসেন (২২) পৃথকস্থানে সাপের কামড়ের শিকার হোন।
জানা গেছে, গত শুক্রবার গভীর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় স্কুলছাত্রী দিপালীকে একটি সাপে কামড় দেয়। সকালে ওই স্কুলছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের সদস্যরা গ্যাস বেড়েছে ভেবে স্থানীয় হাতুড়ে চিকিৎসক নিকট থেকে গ্যাসের বড়ি খাওয়ায়। এতে ওই স্কুলছাত্রীর অবস্থা আরো আশঙ্কাজনক হলে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়। পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে মারা যাওয়া ওই স্কুলছাত্রীর ঘরে একটি সাপ দেখা যায়। পরে ওই সাপটি ধরতে গেলে ফনাতুলে লাফিয়ে লাফিয়ে নিহত স্কুলছাত্রীর মা, ফুফু ও চাচি, চাচাতো ভাইসহ প্রায় ১৩ জনকে কামড়ে আহত করে। এসময় স্থানীয়রা সাপটিকে আটক করে বোতলে বন্দি রেখে পার্শবর্তী খাদিমপুর ইউনিয়নের পাঁচকমলাপুরের গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মৃত রেজাউল বিশ্বাসের ছেলে তুহিন ওঝাকে খবর দিলে তিনি এসে সাপটিকে নিজের হেফাজতে নেন। এবং আহত ১২ জনকে তার পাঁচকমলাপুরের বাড়ীতে নিয়ে ঘরে আটকে ঝাঁড়ফুক করতে থাকে। এরমধ্যে নিহত স্কুলছাত্রীর খালা চুয়াডাঙ্গার শহরতলীর দৌলাতদিয়াড়ের আরজ ড্রাইভারের স্ত্রী আলমিনা খাতুন জোর করে ওখান থেকে চলে এসে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এছাড়া সাপ আতঙ্কে আরো চারজন এমনিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
এদিকে, গতকাল বিকাল ৪ টায় নিহত স্কুলছাত্রী দীপালীর লাশের জানাযাশেষে গ্রাম্য কবরস্থানে দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়েছে।
অপরদিকে, গতকাল সকালে দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর গ্রামের পূর্বপাড়ার জামান আলীর ছেলে উজ্জ্বল হোসেন (২২), সাপের কামড়ে আহত হয়েছে। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জানা গেছে, উজ্জ্বল নিজ বাড়িতে ভুট্টার খড়ি নিতে গেলে খড়ির ভিতরে থাকা একটি সাপ তাকে কামড়ে দেয়। পরে তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।