এন.আই.মিলন, দিনাজপুর প্রতিনিধি- দিনাজপুরে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড.গওহর রিজভী বলেছেন, ১৯৫৫ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহ না হলে আমাদের স্বাধীনতা আসতো না। সাঁওতাল বিদ্রোহই পাকিস্তানীদের বুঝিয়ে দিয়েছিল যে, আমাদের তীর ধনুকের কাছে তোমাদের কামানের গুলি তুচ্ছ।
২২ সেপ্টেম্বর শনিবার দুপুরে কাহারোল উপজেলার ঐতিহাসিক কান্তনগর মন্দির প্রবেশ সড়ক-দ্বীপ-এ দেশের প্রথম সাঁওতাল বিদ্রোহ ও তেভাগা আন্দোলন বিপ্লবীদের স্মারক ভাস্কর্য উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি সাঁওতাল আদিবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যা দিয়েছেন তা খুব কমিউনিটি দিয়েছে। সাঁওতাল আদিবাসীদের দুঃখ দুর্দশার কথা চিন্তা করে আমরা আপনাদের জন্য দু’টি জিনিষ আশ্বাস আপনাদের হয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানাবো। একটি হচ্ছে আদিবাসী ভুমি কমিশন গঠন ও অপরটি মনোরঞ্জন শীল গোপাল এমপি’র উত্থাপিত কাহারোল উপজেলায় ইপিজেড স্থাপন।
তিনি বলেন, সাঁওতাল কমিউনিটির উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছেন। এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হলে সকলকে সাথে নিয়ে একসাথে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব। তার বক্তব্যের শেষে আগামী নির্বাচনে বর্তমান সরকারকে বিজয়ী করতে আরেকবার সুযোগ দিয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সকলের প্রতি আহবান জানান।
স্মারক ভাস্কার্য উম্মোচন কমিটির আবায়ক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল ইমাম চৌধুরী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নাজমুল হক প্রধান এমপি, উষাতন তালুকদার এমপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরুল ইসলাম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জনশীল গোপাল। স্বাগত বক্তব্যে মনোরঞ্জনশীর গোপাল এমপি বলেন, ইতিহাস থেকে প্রেরণা নিয়ে যাতে আগামী প্রজন্ম বাঙ্গালী গৌরব গাঁথাকে ধরে রাখতে পারে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত হয়ে দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ হতে পারে, বাঙালি জাতয়িতাবাদ, মৈত্রী, সম্প্রীতি আর দেশপ্রেমে গড়ে উঠতে পারে, সেই উদ্দেশ্যেই সাঁওতাল বিদ্রোহ আর তেভাগা আন্দোলন আমাদের পাথেয় হয়ে থাকবে। এই দুই আন্দোলন আমাদের নতুন প্রজন্মকে প্রেরণা ও শক্তি দেবে এই প্রত্যাশা থেকেই এই ভাস্কর্য রূপায়নে আমাদের প্রচেষ্টা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে লালিত আমাদের এই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতায় আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে গড়ে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বক্তারা বলেন, মনোরঞ্জনশীল গোপাল এমপি কাহারোলে আদিবাসীদের জন্য সাঁওতাল বিদ্রোহ ও তেভাগা আন্দোলন বিপ্লবীদের স্মারক ভাস্কর্য নির্মাণ করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এই ভাস্কর্য আমাদের তরুন প্রজন্মকে ইহিতাস জানতে উদ্বুদ্ধ করবে ও প্রেরণা যোগাবে। বক্তারা প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমানে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপের সেক্রেটারি জেনারেল শিশির শীল, বাংলাদেশস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (পলিটিক্যাল) রাজেশ উকি, দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক ড. আবু নঈম মুহাম্মদ আবদুছ ছবুর, পুলিশ সুপার সৈয়দ আবু সায়েম, জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি বজলুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারুকুজ্জামান চৌধুরী মাইকেল, সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. হাসনে ইমাম নয়ন, দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বরুপ কুমার বকসী বাচ্চু, স্মারক ভাস্কর্য উন্মোচন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব ও দিনাজপুর নাট্য সমিতির সভাপতি চিত্ত ঘোষ, কাহারোল উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মামুনুর রশিদ চেধৈুরী, কাহারোল উপজেলা আ’লীগের সভাপতি একেএম ফারুক, বীরগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুর ইসলাম নুর, স্মারক ভাস্কর্য নির্মাণ শিল্পী প্রদ্যোত কুমার দাসসহ অন্যান্য অতিথি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন হারুন উর রশিদ ও সারা মারান্ডি।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে আদিবাসীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তেভাগার গান, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠি দিনাজপুর জেলা সংসদ পরিবেশিত শিল্পীদের গান, ভারতের সাঁওতাল লোক সংগীত শিল্পী রথীন কিস্কু সংগীত পরিবেশন করেন।
অনষ্ঠানের শুরুতে দিনাজপুর জেলা পরিষদের বাস্তবায়নে ঐতিহাসিক কান্তনগর মন্দির প্রবেশ সড়ক-দ্বীপ-এ সাঁওতাল বিদ্রোহ ও তেভাগা আন্দোলন বিপ্লবীদের সিধু-কানু‘র স্মারক ভাস্কর্য উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ড. গওহর রিজভী।
এর পরে উদীচী জেলা সংসদের শিল্পীরা জয় বাংলা বাংলার জয়, বাংলার হিন্দু বাংলার বৌদ্ধ ও কাহারোল আদিবাসী ছাত্র পরিষদের শিল্পীরা সিধু কানু বন্দনা সংগীত, সাঁওতালী ভাষায় দেশাত্ববোধক গান পরিবেশন করে।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে স্মারক ভাস্কর্য উন্মোচন প্রস্তুতি কমিটির সকল সদস্য ও আদিবাসী জনগোষ্ঠির বিপুল সংখ্যক মানুষসহ সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।