সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলায় অপহরণ করে মুক্তিপণ না পেয়ে ১৩বছরের এক শিশুর ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ ওঠেছে। নির্যাতিত শিশু মনির তালুকদার বর্তমানে আশংকাজনক অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। সে পার্শ্ববর্তী রায়গঞ্জ উপজেলার সোনাখাড়া ইউনিয়নের পরিবহন শ্রমিক তোতা তালুকদারের ছেলে ও স্থানীয় একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। এ ঘটনায় নির্যাতিত শিশুর বাবা বাদি হয়ে রবিবার বিকেলে সিরাজগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন।
মামলার নথি ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার সন্ধ্যায় পারিবারিক প্রয়োজনে মনিরকে তার বাবা সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার মিরপুরে মেয়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেন। মনির রায়গঞ্জ উপজেলার ভূইয়াগাতি নামক স্থান থেকে বাসযোগে তার বোনের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলে কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট বাজারে এসে বাসটি বিকল হয়ে পড়ে। অন্যান্য যাত্রীদের সাথে মনিরও বিকল বাস থেকে নেমে অন্য বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এসময় বাজার ভদ্রঘাট এলাকার জামাল প্রামানিকের ছেলে সুলতান প্রামানিক (৩০), মৃত আজিজুল হক খানের ছেলে মফিজ খান (৫০), আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মো. আকরাম হোসেনসহ(২২) অজ্ঞাত ৩/৪জন অপহরণ চক্রের সক্রিয় সদস্য মনিরকে তার বোনের বাড়ি পৌঁছে দেয়ার কথা বলে ভদ্রঘাট বাজারের পশ্চিমে পাঙ্গাসী সড়কের কালিঞ্জা ব্রিজের পাশে নিয়ে যায়। পরে অপহরণকারীরা দুই লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে মনিরকে তার বাবার নিকট মোবাইল করতে বলে।
কিন্তু বাবার মোবাইল নম্বর স্মরণ না থাকায় শুরু হয় পাষবিক নির্যাতন। এসময় হাত, পা’সহ সারা শরীরে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ও সিগারেটের অসংখ্য স্যাকা দিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়। এমনকি, তার ডান হাতের আঙ্গুলগুলো ব্লেড দিয়ে কুচি কুচি করে কেটে ক্ষতস্থানে বালু ও লবন ছিটিয়ে দেয়া হয়। সারারাত থেমে থেমে চলে বর্বর এ নির্যাতন। এসময় মনির পানির জন্য ছটফট করলে তাকে পাশের খাল থেকে পানি এনে খাওয়ানো হয়। এরই এক পর্যায়ে মনির জ্ঞান হারিয়ে ফেললে মৃত ভেবে ফেলে রেখে অপহরণকারীরা পালিয়ে যায়।
পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয়রা আশংকাজনক অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে মনিরকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসককে দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয় এবং মনিরের বাবাকে খবর পাঠায়। খবর শুনে মনিরের বাবা এসে ছেলেকে নিয়ে রায়গঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে ভর্তি করেন।
সেখানে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পাষবিক নির্যাতনের শিকার শিশু মনির সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
মামলার বাদী ও নির্যাতিত শিশু মনিরের বাবা তোতা তালুকদার বলেন, আমার ছেলে অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের। আমিও কোনদিন কারও অন্যায় করিনি। কেন আমার ছেলের এমন হলো।
এসময় অপহরণকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
শিশু মনিরের ওপর বর্বর নির্যাতনের সত্যতা নিশ্চিত করে ভদ্রঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, নির্যাতনকারীরা মাদক সেবন, ব্যবসা ও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। তবে, এব্যাপারে আমার কাছে কেউ কোন অভিযোগ না করলেও দোষিদের শাস্তি হওয়া উচিৎ।