নিজস্ব সংবাদাতা, ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহের শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দ্দারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করা হয়েছে। ওই বালিকা বিদ্যালয়ের সহ-প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান দুদকের সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ে এই অভিযোগ করেন। অভিযোগ পত্রে প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিনের ফান্ড তছরুপের ২৪টি খাত উল্লেখ করা হয়। লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয় মাত্র এক বছর চাকরীতে যোগদান করেই দিলারা স্কুলের বিভিন্ন খাতের ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ নিয়ে গোটা শৈলকুপা শহরে ছি ছি রব উঠেছে। একজন মহিলা হয়ে এ ভাবে স্কুলের সম্পদ লুটপাট করার বিষয়টি ভাল চোখে দেখছে না শৈলকুপার মানুষ। এদিকে স্কুলের টাকা লুটপাটের ঘটনাটি তদন্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্কুলের সভাপতি উসমান গনি। তিনি ঘটনা তদন্তে বুধবার তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। শৈলকুপা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামীম আহমেদ খানকে আহবায়ক, সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান এবং যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে সদস্য করে ৩ সদস্যের এই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছেন। দুদকে পাঠানো অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দ্দার ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশান ও নোটশীটে কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর ছাড়াই লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। কমিটির অনুমোদন ছাড়া অর্থ ব্যয় আবার কখনো সাধারণ তহবিল ব্যতিত বিদ্যালয়ের নামে কৌশলে নতুন একাউন্ট করে একক চেকে টাকা লেনদেন করছেন। কখনো বা বিল-ভাউচার জালিয়াতি, ফরম পুরন ও রেজিস্ট্রেশনের অতিরিক্ত অর্থ আদায়, নীতিমালার বাইরে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকার হ্যান্ডক্যাশ উত্তোলন, নির্ধারিত নোটবই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছেন। বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানের নামে চাঁদা তুলে তা আত্মসাৎ করেছেন। ৫০ শতাংশ হারে বেতন উত্তোলন, ছাত্রী ভর্তি, ফরম পুরন, জরিমানাসহ বিভিন্ন খাতের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ফেল করা ছাত্রীদের কাছ থেকে সাবজেক্ট প্রতি ২০০ টাকা আদায় করে পকেটস্থ করেছেন। পরিপত্র মোতাবেক ১০০% সরকারী বেতন পাওয়ার পরও স্কুল থেকে প্রতি মাসে ১৪ হাজার ৫০০ টাকার বেতন নিচ্ছেন অবৈধ ভাবে। ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারী পর্যন্ত স্কুলের ভর্তি ও বেতন বাবদ আয় ছিল ১০ লাখ টাকা। কিন্তু ব্যাংকে জমা আছে ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। বাকী টাকার হদিস নেই। প্রতিদিন তিনি স্কুল কামাই করা ছাত্রীদের কাছ থেকে ১০ টাকা হারে জরিমানা আদায় করতেন। সেই হিসিবে ১১০০ ছাত্রীর মধ্যে প্রতিদিন গড়ে দেড়’শ জন অনুপস্থিত থাকে। সেই হিসেবে প্রতিদিন স্কুলের দেড় হাজার টাকা ফাইন বাবদ আদায় হয়। কিন্তু সে টাকা তিনি ফান্ডে জমা না করে ভ্যানিটি ব্যাগে ভরেন বলে অভিযোগ। অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষিকা স্কুলে এসে শিক্ষকদের সাথে ভাল ব্যবহার করেন না। বিভিন্ন সময়ে প্রধান শিক্ষিকা ছুটিতে গেলে সহকারী প্রধান শিক্ষকের উপর দায়িত্ব না দিয়ে জুনিয়র শিক্ষকদের উপর দায়িত্ব দিয়ে চাকুরী বিধি লঙ্ঘন কেরন। গত ১১ মাসে ৪ জন শিক্ষক কে অন্যায় ভাবে শোকজ নোটিশ দেয়া হয়েছে। এ সব বিষয়ে প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দ্দার জানান, সব মিথ্যা অভিযোগ। তার সম্মানহানী করতেই এ সব কল্প কাহিনী সাজানো হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ উসমান গনি জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির রিপোর্টের প্রেক্ষিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।