অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস সামাজিক ব্যবসা করতে উদ্যোক্তাদের আহবান জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার ‘ন্যাশনাল বিজনেস ডায়ালগে’ এর আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি) এবং ১৫টি জাতীয় বাণিজ্য সংগঠন। যৌথভাবে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, ‘আমি যত দিন আছি, তত দিন পর্যন্ত সামাজিক ব্যবসা করতে আপনাদের উৎসাহ দেব।
যেকোনো ব্যবসা করেন। অসুবিধা নেই, এর পাশে একটা সামাজিক ব্যবসা করেন। কী জন্য করবেন? আপনার গ্রাম, থানা, উপজেলায় যদি খাবার পানির সমস্যা থাকে, তাহলে এমন একটা কাজ করবেন যেন খাবার পানি তারা পায়। চিকিৎসার সুযোগ পায়।
সরকারের ওপর কেন ভরসা করে বসে থাকেন? আর তাদের গালিগালাজ করেন, কিছু করে না। আপনি কী তার চেয়ে কম? কী আসে-যায়? আপনার এলাকা। আপনি যতটুকু করতে চান। নিজের গ্রামে করেন, উপজেলায় করেন। ভিন্ন জেলায়ও করতে পারেন। যেখানে আপনার ব্যবসা আছে বা যেখানে আপনি কাজ করেন। ’
এসময় তিনি আরও বলেন, ‘সামাজিক ব্যবসাটা কী? কেমন ব্যবসা? যে ব্যবসা স্বনির্ভরশীল। নিজের টাকায় নিজে চলতে পারে। কিন্তু ব্যবসা থেকে কোনো মুনাফা আমি চাই না। এটুকু শুধু। অন্য ব্যবসায় আমি মুনাফা চাই। এ ব্যবসায় আমি মুনাফা চাই না। আমি বিনিয়োগ করি।
নিজের টাকা ফেরতও নিয়ে আসতে পারি। সেহেতু ব্যবসাটা নিজের টাকায় নিজে চলবে। যেহেতু আমি উদ্যোক্তা, সেহেতু আমি জানি কী করে ব্যবসা করতে হয়। আরেকজন জানে না। সে সরকারি কর্মচারী। সে গিয়ে যে কাজ করে সেটা আমার পছন্দ হয় না। কাজেই আমি নিজের মতো করে করব। আনন্দ করব। যখন পারি নিজ এলাকায় যাব। দেখব যে তারা স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। সে (মানুষ) বলবে যে হ্যাঁ, সে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। যেকোনো একটা কিছু করেন। যেটা আপনার পছন্দ হয়।
সেটা পরিবেশ নিয়ে বা শিক্ষা নিয়ে হতে পারে। কত রকম ব্যবস্থা আপনার সামনে আছে। কিছুটা টাকা আলাদা করে রেখে দেব। এটা আমি সামাজিক ব্যবসায় বিনিয়োগ করব। এবং সামাজিক ব্যবসার মজা হচ্ছে আপনি যদি সফল হন, তবে ওই টাকা নিয়ে আসতে পারবেন। তার পর থেকে আর এক পয়সাও ঢালবেন না। ওই ব্যবসা দিয়ে ব্যবসা হবে। যারা সামাজিক ব্যবসা করতে চায় তাদের আমি বেছে বেছে বিনিয়োগ করব। ব্যবসাটা করতে পারেন। ওই যে আমার পুরনো পেশার জিনিস, আমি বলতে থাকব। আপনারা শুনবেন। আমারও ভালো লাগবে বলে। বিদেশে অনেকে করে। ’
তিনি আরও বলেন, “বিদেশের অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী আমাদের সঙ্গে সামাজিক ব্যবসা করেন বাংলাদেশে এসে। শুনেছেন আপনারা ড্যানোনের কথা, ইউনিক্লোর দোকান আপনারা দেখেছেন। এগুলো সামাজিক ব্যবসা। তারা এখানে এসেই করেছে। যেহেতু তারা উদ্বুদ্ধ হয়েছে। এখান থেকে এক পয়সাও তারা রোজগার করতে চায়নি। আমাকে জিজ্ঞেস করে, কই তোমার দেশের ব্যবসায়ীরা আসে না কেন?
আমি বলি যে আসবে। সময় আসলে আসবে। সান্ত্বনা দিই। নতুন একটা কথাও বলি সব সময়। মানুষ শুনে হাসে, কখনো সিরিয়াসলি নেয়। আমি বলি যে ‘মেকিং মানি ইজ হ্যাপিনেস। মেকিং আদার পিপল হ্যাপি ইজ এ সুপার হ্যাপিনেস। ’ (অর্থ আয় করা আনন্দের, মানুষকে খুশি করা আরও আনন্দের) এর চেয়ে বড় আনন্দ মানুষের আর কিছু হতে পারে না।
সেদিকেই আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করব। কিন্তু মূল লক্ষ্য, যে কয়টা দিন আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি এই নতুন বাংলাদেশের জন্য… যেন বলে যেতে পারি, এই দেশ আমাদের একটা সুযোগ দিয়েছিল। আমরা সে সুযোগের পূর্ণ ব্যবহার করেছি। অতীতের পচা বাংলাদেশ থেকে আমরা একটা নতুন তরতাজা বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছি। এবং আমরা এটা পারি। এটা কোনো কল্পকাহিনী নয়। আমার দৃঢ়বিশ্বাস, আপনারা যদি মন ঠিক করেন তাহলে আমরা এই নতুন বাংলাদেশ খুব দ্রুত গড়ে তুলতে পারব। ”