নিউজ ডেস্ক:
১১৭ বার বুকে ছুরি চালিয়ে পৈশাচিকভাবে বাংলাদেশি ট্যাক্সিচালক মোহাম্মদ কামালকে হত্যা মামলায় শোটা মেকোসভেলি (৩২) নামক এক আমেরিকানের ৬০ বছর কারাদণ্ড হলো।
গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের স্ট্যামফোর্ড সুপিরিয়র কোর্টের বিজ্ঞ বিচারক জন ব্লাউয়ি এ রায় প্রদান করেন। শোটা মেকোসভেলি জর্জিয়ার অভিবাসী। রায় ঘোষণার আগে ঘাতকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আদালতের সামনে স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, সারারাত কাজের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ ছিনতাইয়ে বাধা দিতে গিয়েই কামাল এমন নৃশংসতার শিকার হয়েছেন বলেও তদন্ত কর্মকর্তারা মাননীয় আদালতকে অবহিত করেন।
আরো উল্লেখ্য যে, এর ঠিক এক সপ্তাহ আগে নিউইয়র্কের কুইন্সের একটি আদালত আরেক আমেরিকানকেও এক বাংলাদেশিকে পিটিয়ে হত্যার মামলায় আজীবনের দণ্ড দিয়েছেন। সেই ঘাতকের বয়সও ছিল ৩২ বছর এবং সে পিটিয়ে হত্যা করেছিল রাজশাহীর সন্তান ইশতিয়াক কাদিও রবি (৫১)কে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে।
কানেকটিকাট আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট বুধবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে বাংলাদেশি এই ট্যাক্সিচালক মোহাম্মদ কামাল (৪৭) কে হত্যার পর রাস্তার পাশে লাশ ফেলে পালিয়ে যায় ঘাতক। ডোলিট রোডের পাশে কর্মরত শ্রমিকরা প্রথমে কামালের লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। একই দিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে স্ট্যামফোর্ড পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কামালের মৃতদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। নিহত কামালের দেহে ১১৭টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল বলে পুলিশ উল্লেখ করেছে। ছুরিকাঘাতের আগে নিহত কামালের সঙ্গে ঘাতকের দীর্ঘ সময় ধস্তাধস্তি হয়েছে। নিজের জীবন বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন কামাল।
তদন্তে উদঘাটিত হয় যে, ঘাতক শোটা তার ট্যাক্সির যাত্রী ছিলেন। কামালের কাছে থাকা অর্থ ছিনতাইয়ের সময় বাধা দেয়ায় শোটা ক্ষিপ্ত হয়ে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে তাকে হত্যা করে। কামালের স্ত্রী সে সময় জানিয়েছিলেন যে, প্রতি রাতে কাজ শেষে ঘরে ফিরতেন ৫০০ থেকে ৬০০ ডলার নিয়ে। এই অর্থই ছিনতাইকারির টার্গেট ছিল বলে পুলিশের ধারণা। তবে, শুধুমাত্র এই অর্থ ছিনতাইয়ের জন্যে ১১৭ বার ছুরিকাঘাতের ঘটনা আর কখনোই পুলিশের নজরে আসেনি।
মামলার বিবরণে প্রকাশ, নিহত কামালের স্ত্রী রাজিয়া শালিয়া বুধবার সকাল ৭টার দিকে রাতে তার স্বামী ঘরে না ফেরার বিষয়টি স্ট্যামফোর্ড পুলিশকে জানান। ঘটনার ১৩ ঘণ্টা পর পুলিশ খুনি শোটা মেকোসভেলিকে গ্রেফতার করে। ওই দিন তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে খুনের সাথে জড়িত থাকার কিছু আলামতও উদ্ধার করে। তার কাছ থেকে রক্তমাখা ডলার উদ্ধারের পর কামাল হত্যার সাথে তার জড়িত থাকার ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত হন। পরদিন তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
শোটা মেকোসভেলি আদালতে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন। স্ট্যামফোর্ড সুপিরিয়র কোর্টের বিজ্ঞ বিচারক তার বিরুদ্ধে এক মিলিয়ন ডলারের জামিননামা ধার্য করে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। দুই দিন পর শুক্রবার আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষুব্ধ প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করলে বিজ্ঞ বিচারক খুনি শোটা মেকোসভেলির জামিন বন্ডে আরও ২ লাখ ডলার বাড়িয়ে দেন।
বাংলাদেশি এই ট্যাক্সিচালক মোহাম্মদ কামাল হত্যার রায় ঘোষণার পর তার স্ত্রী রাজিয়া শালিয়া তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, নিহত কামালের খুনির সর্বোচ্চ শাস্তি ৬০ বছর কারাদন্ড প্রদান করায় তিনি খুশি হয়েছেন। এর ফলে কামালের আত্মা শান্তি পাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রায় প্রদানের সময় কামাল দম্পতির একমাত্র ছেলে শাফায়েত (৭) আদালতে সামনের সারিতে বসে ছিলো।
মামলার রায় প্রদানের পর বিজ্ঞ বিচারক জন ব্লাউয়ি বলেন, খুনি শোটা মেকোসভেলির সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানই নিহত কামালের পরিবারের জন্য যথেষ্ট নয়। যে একজন নিরীহ মানুষকে ১২৭ বার ছুরিকাঘাতে খুন করতে পারেন তার জন্য এ শাস্তি একেবারেই নগণ্য।
সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট স্টেট অ্যাটর্নি জেমস বার্নার্ডির পক্ষে নিহত কামালের মামলা পরিচালনা করেন সুজান ক্যাম্পবেল। তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এ ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। খুনি শোটা মেকোসভেলি নির্মমভাবে আঘাতের পর আঘাত করে তাকে হত্যা করেছে। কামালের দেহে ১২৭টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এটা একটি নৃশংস ঘটনা।
ঘাতক শোটা মেকোসভেলির পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন নর্ম প্যাটিস। এ মামলা প্রসঙ্গে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অপর দিকে মামলার রায় ঘোষণার আগে ঘাতকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আদালতের সামনে স্থানীয় স্ট্যামফোর্ডের শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
নিহত কামাল ১৯৯২ সালে ডিভি লটারি পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে কানেকটিকাটের স্ট্যামফোর্ড শহরে বসবাস করছিলেন। তাঁর দেশের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা থানার চিপাতলী বখতিয়ারপাড়ায়।