ভূয়া সনদে সরকারি চাকুরী! প্রতারণা চলাচ্ছে স্বামী-সন্তানসহ মাতৃভূমির সাথে মেহেরপুরের মহিমার কান্ড॥ স্বামীকে তালাকের আগে দ্বিতীয় বিয়ে! ভূয়া সনদে সরকারি চাকুরী! প্রতারণা চলাচ্ছে স্বামী-সন্তানসহ মাতৃভূমির সাথে
মেহেরপুর প্রতিনিধি : মেহেরপুরের মহিমা শুধু স্বামী-সন্তানদের সাথেই নয়; প্রতারণা করে চলেছে দেশ-মাতৃকার সাথে। প্রতারক ওই মা তার কোমলমতি দুই ছেলে-মেয়েকে ফেলে রেখে অন্যত্র বিয়ে করে ৩ মাস পরে স্বামীকে তালাক দিয়েছে। এসএসসি পাশের বৈধ সার্টিফিকেটের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নিজের নাম ও জন্ম তারিখ পাল্টে মোটা অংকের টাকা দিয়ে অন্য জেলার এক স্কুল থেকে ৮ম শ্রেণি পাশ সার্টিফিকেট নিয়ে চাকুরী করছে। এঘটনায় প্রথম স্বামী তার স্ত্রী মহিমা ও তার দ্বিতীয় স্বামীর নামে মেহেরপুর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়নের চাঁদবিল গ্রামের মোঃ ফয়েজ উদ্দিনের মেয়ে মোছাঃ মহিমা খাতুন। জাতীয় পরিচয় পত্রে (নং-১৯৮৫৫৭১৮৭১৯১৯৯২৬০) স্বামীর নাম মোঃ হাফিজ উদ্দিন, শিক্ষাগত যোগ্যতা- মাধ্যমিক, জন্ম তারিখ- ৩ এপ্রিল ১৯৮৫। প্রায় ১৫ বছর আগে একই গ্রামের মৃত মহাসিন আলীর ছেলে মোঃ হাফিজ উদ্দিনের সাথে বিয়ে হয়। বিবাহিত জীবনে তাদের ঘরে আসে ২টি সন্তান। বড় মেয়ে বিপাশা নাজনীন (রিয়া) চলতি বছরে মেহেরপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও বিএম কলেজের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী এবং ছোট ছেলে ছায়েম আল রক্তিম স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির ছাত্র। ২ সন্তানের জননী মহিমা খাতুন স্থানীয় ইম্প্যাক্ট জীবন মেলা হেলথ সেন্টারে আয়া কাম ক্লিনার পদে চাকরী করত। স্বামী হাফিজ উদ্দিনের অভিযোগ ওই সময় তার স্ত্রী মহিমা খাতুন সহকর্মী মেহেরপুর শহরের ঘোষপাড়ার মোঃ মতিন খানের ছেলে আমির খসরু খানের সাথে প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে তোলে ও অনৈতিক কাজ করতে থাকে। তিনি আরো বলেন, লোক জানাজানি হলে আমি আমার স্ত্রীকে ও তার প্রেমিক পুরুষ আমির খসরু খানকে সাবধান করি। পরবর্তীতে আমার স্ত্রী মহিমা খাতুন লক্ষীপুর জজ আদালতে চাকুরী নেওয়ার নামে আমার ব্যবসার ৬ লাখ টাকা খরচ করে। এছাড়া তার সরকারি চাকরী নেওয়ার বয়স শেষ হয়ে গেলেও সে তার প্রেমিক পুরুষ আমির খসরু খানের সহযোগিতায় ভুয়া জন্ম সার্টিফিকেট, ৮ম শ্রেণি পাশ সনদ ও অন্যান্য জাল সার্টিফিকেট করে লক্ষীপুর জজ কোর্টে ঝাড়–দারের চাকুরী নেয়। প্রেমিক পুরুষ আমির খসরু খানের সহযোগিতায় মহিমা খাতুন নিজেকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলোকদিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও নাম পরিবর্তন করে মোছাঃ মরিয়ম খাতুন নাম ধারণ করে এবং চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলিয়ারপুর আজিজ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৪ সালে ৮ম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা মোট ৬১২ নম্বর পেয়ে ৪র্থ স্থান অধিকার করে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার ভূয়া সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে। যাতে তার প্রকৃত জন্ম তারিখ আড়াল করে ২৫ এপ্রিল ১৯৯০ সাল করা হয়েছে। এছাড়াও আলোকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ইসলাম উদ্দিনের নিকট থেকে নাগরিক/চারিত্রিক সনদপত্র সংগ্রহ করে। নতুন নাম, ঠিকানা এবং শিক্ষা ও চারিত্রিক সনদ ব্যবহার করে ২ অক্টোবর/১৬ তারিখে লক্ষীপুর জজ আদালতে চাকুরীতে যোগ দেয় নামধামী মরিয়ম খাতুন। তার আগে ২৮ সেপ্টম্বর/১৬ তারিখে মহিমা খাতুন ইম্প্যাক্ট জীবন মেলা হেলথ সেন্টারের চাকুরী থেকে অব্যাহতি নেয়। এরপরও মহিমা খাতুনের নামে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অফিস সহায়ক পদে চাকুরীর জন্য ৯ মার্চ ২০১৭ তারিখ পরীক্ষার দিন নির্ধারণ করে প্রবেশপত্র ইস্যূ করা হয়। চাকুরীতে যোগদানের পরে নতুন নাম মরিয়ম খাতুন ও নতুন ঠিকানা চুয়াডাঙ্গার আলোকদিয়া গ্রামের নাম দিয়ে ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারী তারিখে প্রেমিক পুরুষ আমির খসরু খানের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ঢাকার শ্যামলী এলাকার একটি কাজি অফিস থেকে তাদের বিয়ের কাজটি সম্পন্ন হয়। তবে মজার ব্যাপার- তাদের বিয়ের প্রায় ৩ মাস পরে ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের দিকে পূর্বের নাম মহিমা খাতুন নাম রেখেই প্রথম স্বামী হাফিজ উদ্দিনকে তালাক দেয়। বাদী হাফিজ উদ্দিনের আরো অভিযোগ তার ও তার কন্যার অনুপস্থিতিতে তালাকের পূর্বে তার স্ত্রী মহিমা খাতুন তার বাড়ি থেকে নগদ ৮০ হাজার টাকা ও প্রায় ৬ ভরি সোনার গহনা (যার মূল্য আনুমানিক ৩ লাখ ৫০ হাজার ঠাকা) চুরি করে নিয়ে যায়। এসব ঘটনায় বাদী আসামীদের বিরুদ্ধে দঃবিঃ ৪৯৭/৪৯৮/৩৮০/৪৬৫/৪৬৭/৪৭১/১০৯ ধারা মতে ওয়ারেন্ট আদেশ চেয়ে সুবিচারের প্রার্থনা করেছেন। যার মামলা নংÑসিআর ৪০৪/২০১৭ । আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহম্মদ আলী বলেন- যে ছাত্রী একবার এসএসসি পাশ করেছে; সে ছাত্রী আবার অন্য বিদ্যালয় থেকে কিভাবে ৮ম শ্রেণী পাশ সার্টিফিকেট যোগাড় করল তা আমার বোধগম্য নয়। আসামী মহিমা খাতুন জানান- বাদী তার স্বামী হাফিজ উদ্দিন তাকে দিনের পর দিন যখন-তখন শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। তার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে গত ১ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে আমি আমার স্বামীকে তালাক দেই। আসামী আমির খসরু খান বলেন- বাদির অভিযোগ সত্য নয়। আমি ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী গত ৩ জানুয়ারী ২০১৭ তারিখে মরিয়ম খাতুনকে বিয়ে করি। চাঁদবিল গ্রামের মফিজুর রহমান ও জিয়ারুল ইসলাম জানান, বাদীর অভিযোগ সত্য। আসামিরা বাদীর ৬ লাখ টাকা বাড়ি থেকে নিয়ে গেছে। আমারা আসামিকে মহিমা খাতুন বলে চিনি ও জানি। চাঁদবিল গ্রামের আনারুল ইসলাম জানান- বাদীর অভিযোগ সত্য। তিনি বলেন বাদী হাফিজ উদ্দিন কখনও আসামী মহিমা খাতুনকে মারধর করেনি। তিনি আরো বলেন- আসামি মহিমা খাতুন মোবাইল ফোনে বাদী হাফিজ উ্িদনকে জানায় সে উচ্চ ফ্যামিলির সাথে উঠাবসা করবে। তার গহনা লাগবে তাই সে বাড়ি থেকে ওই গহনা নিয়ে গেছে। বাদী ও আসামির মেয়ে বিপাশা নাজনীন (রিয়া) জানায়, তার বাবার অভিযোগ সত্য। তার মা তার সামনে বাড়ি থেকে গহনা গুলো বের করে নিয়ে গেছে। রিয়া আরো জানায়, তার বাবাকে কোনদিন তার মায়ের গায়ে হাত তুলতে দেখিনি সে। এদিকে আমির খসরু খান প্রেকিমা মহিমা খাতুনকে বিয়ে করতে তার প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেওয়ায় প্রথম স্ত্রী স্বামী আমির খসরু খানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। যার মামলা নং- সিআর-২৭০/১৭। বাদী হাফিজ উদ্দিনের দায়ের করা মামলার উপর আদালত তদন্তাভার দিয়েছেন মেহেরপুর জেলা মহিলা বিষয়ক প্রোগ্রাম অফিসার সেলিম রেজার উপর।