চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র পদে নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন আজ রোববার শপথ গ্রহণ করবেন। সকাল সাড়ে ১১টায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ তাকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। বিষয়টি আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদসহ বিএনপির চট্টগ্রামের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য মেয়রের আত্মীয় ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মিলিয়ে ২৫ জনের একটি তালিকা করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। শপথ অনুষ্ঠানে চসিকের প্রধান নির্বাহী ও সচিবও উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া শপথ গ্রহণ উপলক্ষে চট্টগ্রাম থেকে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকশ নেতাকর্মী ঢাকায় গেছেন।
এদিকে আজ শপথ গ্রহণ করলেও আগামীকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তিনি। আজ শপথ গ্রহণ শেষে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন শাহাদাত। তিনি চট্টগ্রাম আসবেন আগামীকাল।
এদিন সকালে ডা. শাহাদাত মহানগর প্রভাতী ট্রেনযোগে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন এবং বেলা ১২টায় চট্টগ্রামে এসে পৌঁছানোর কথা। চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে তিনি দলের নেতাকর্মী ও সুধীজনের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখবেন। এরপর হযরত আমানত শাহ (রা.) ও হযরত বদর শাহ’র (রা.) মাজারে গিয়ে জিয়ারত করবেন। এরপর তিনি লালদিঘি পাড় সংলগ্ন চসিকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের সম্মেলন কক্ষে চসিকের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় করবেন। এরপর তিনি টাইগারপাস ভবনে যাবেন। সেখানে দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। একই দিন বিকালে তিনি পশ্চিম বাকলিয়া ডিসি রোড ফালাহ গাজী জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে বাবার কবর জেয়ারত করবেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডা. শাহাদাত হোসেনের ব্যক্তিগত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় চসিকের ষষ্ঠ পরিষদের নির্বাচন। এ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। নির্বাচনে ভোট পড়ে ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ। নির্বাচনে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ডা. শাহাদাত। তিনি ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট পান। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরীকে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৪৮ ভোট দেখিয়ে নির্বাচিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। একই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন রেজাউল করিম।
২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ডা. শাহাদাত ৯ জনকে বিবাদী করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন। এজাহারে তিনি নির্বাচন পরবর্তী ফলাফল সংক্রান্ত প্রকাশিত গেজেট (রেজাউল করিমকে মেয়র ঘোষণা করে) বেআইনি, অবৈধ ও ন্যায় নীতির পরিপন্থী বলে দাবি করেন। ১ অক্টোবর চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক খাইরুল আমিন শাহাদাতকে মেয়র ঘোষণা করে এ মামলার রায় দেন এবং রেজাউল করিম চৌধুরীর মেয়র নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করেন। পাশাপাশি ১০ দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবকে নির্দেশ দেন। এরপর ৮ অক্টোবর শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে সরকার পতনের পর ১৯ আগস্ট চট্টগ্রামসহ দেশের ১২ সিটি কর্পোরশনে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে ১৭ অক্টোবর চসিক থেকে প্রশাসক বাদ দেওয়া হয়। এরপর ২২ অক্টোবর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় শাহাদাতের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের জন্য আজকের দিনটি নির্ধারণ করে।