মার্কিন সাহায্য স্থগিতে শঙ্কা

0
5

বিদেশে মার্কিন সহযোগিতা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সোমবার রাতে দ্বিতীয় দফায় শপথ নেওয়ার দিনে এমন সিদ্ধান্ত সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে বাংলাদেশে।

উন্নয়ন সহযোগীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তের বিরূপ প্রভাব পড়বে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার বিভিন্ন প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএসএআইডির ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র জোরালো বন্ধুত্ব বজায় রেখে আসছে। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত অংশীদার হিসেবে স্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারিও অভিন্ন স্বার্থ থেকে নির্ধারিত হয়।

ইউএসএআইডির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ইউএসএআইডির কর্মসূচি এশিয়ায় বৃহত্তম।

এই কর্মসূচিতে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য কর্মসূচির পাশাপাশি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ গণতন্ত্র ও সুশাসন, মৌলিক শিক্ষা এবং পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ও আছে।

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বড় ধরনের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম দেখভাল করে। ২০৩১ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ইউএসএআইডি অনেক পুরনো অংশীদার হিসেবে আছে।

গত সোমবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে রোহিঙ্গাদের সংকটে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নতুন একটি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে।

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় সবচেয়ে বেশি অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে আড়াই শ কোটি ডলারেরও বেশি সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য সহায়তার পরিমাণ ২১০ কোটি ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র ইউএসএআইডি ছাড়াও পররাষ্ট্র, কৃষি, বিচার, জ্বালানিবিষয়ক দপ্তর এবং ফেডারেল ট্রেড কমিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়ে থাকে। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ৪৯ কোটি ডলার (প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা) সহায়তা দিয়েছে।

২০২৪ সালের আংশিক হিসাবেও সহায়তার পরিমাণ প্রায় কাছাকাছি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দপ্তর হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র এখন তার বৈদেশিক সাহায্য পুনর্মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হিসেবে নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট শিল্প এবং আমলাতন্ত্র আমেরিকান স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং অনেক ক্ষেত্রে আমেরিকান মূল্যবোধের পরিপন্থী। তারা বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত করে।

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে নীতি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন কোনো সহায়তা বিদেশে যুক্তরাষ্ট্র আর দেবে না। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচির কার্যকারিতা মূল্যায়ন ও সংগতি যাচাইয়ের জন্য বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সহায়তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত থাকবে।

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সহায়তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের নির্দেশনা তাত্ক্ষণিকভাবে কার্যকর করা সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার জন্য বাধ্যতামূলক। প্রতিটি বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি পর্যালোচনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ ও সংস্থা প্রধানরা বাজেট ও ব্যবস্থা বিষয়ক অফিসের পরিচালকের সঙ্গে পরামর্শক্রমে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন। পর্যালোচনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশে সহায়তা কর্মসূচিগুলো অব্যাহত রাখা, পরিবর্তন ও বন্ধ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

উন্নয়ন সহযোগী এনজিওগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিজ বাংলাদেশের (এডাব) পরিচালক এ কে এম জসীম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইউএসএআইডিসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা বড় দাতা প্রতিষ্ঠান। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সহযোগিতা বন্ধের সিদ্ধান্ত কোন কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে তা আমাদের আরেকটু বুঝতে হবে।’

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতি ও প্রয়োগের দিকে নিবিড় দৃষ্টি রাখছে বাংলাদেশ। জানা গেছে, বৈদেশিক সহায়তা স্থগিতের আওতায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ডব্লিউএইচওতে বড় অর্থের জোগান দিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি ডব্লিউএইচও ছাড়লে সংস্থাটি দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর গতকাল সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দেওয়ার সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের প্রতিটি ডলার ব্যয়, প্রতিটি তহবিল এবং প্রতিটি নীতি অনুসরণের ক্ষেত্রে তিনটি সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এগুলো হলো—এটি (সহায়তা, নীতি) কি যুক্তরাষ্ট্রকে আরো নিরাপদ করে তোলে? এটি কি যুক্তরাষ্ট্রকে শক্তিশালী করে তোলে? এটি কি যুক্তরাষ্ট্রকে আরো সমৃদ্ধ করে তোলে?’

মার্কো রুবিও বলেন, ‘আমাদের জাতীয় স্বার্থ এগিয়ে নিতে আমরা আরো উদ্ভাবনী, চটপটে এবং মনোযোগী পররাষ্ট্র দপ্তর গড়ে তুলব। এর জন্য কিছু অগ্রাধিকার প্রতিস্থাপন, কিছু বিষয়কে গুরুত্ব না দেওয়া এবং কিছু অনুশীলন বাদ দেওয়া প্রয়োজন।’