নিউজ ডেস্ক:
ধরুন, আপনি এক হাজার টাকার কেনাকাটা করছেন কিংবা কোনো সেবা ভোগ করেছেন কিন্তু আপনাকে ব্যয় করতে হচ্ছে মাত্র পঞ্চাশ টাকা কিংবা সত্তর টাকা, বাকিটা পুরোটাই ডিসকাউন্ট! আপনার কেমন অনুভূত হবে তখন!ক্রিকেটের ধারাভাষ্যকার শামীম চৌধুরীর মতো হয়ত বলবেন,‘ফিলিং ওভার দ্যা মুন!’
অবিশ্বাস্য মনে হলেও এও সম্ভব। এর থেকেও বেশি সম্ভব। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে তাইপের ব্যবসায়ী স্যাম হুয়াং সঙ্গে। স্যাম হুয়াং মাত্র ৭৬ ডলার ব্যয় করে উপভোগ করেছেন ৭ হাজার ডলারের প্রথম শ্রেণির বিমান সেবা। শুধু তাই নয়, জাপানে একটি ফাইভ স্টার হোটেলে থেকেছেন প্রায় বিনা খরচে!
কীভাবে সম্ভব? প্রশ্ন জাগতেই পারে। সম্ভব যদি আপনি কানটাস ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লায়ারের সদস্য হন। কানটাস হচ্ছে জনপ্রিয় ট্রাভেল এজেন্সি। শুধু ট্রাভেল এজেন্সি না, তারা অনলাইনে কেনা-বেচাও করে। তাদের সেবা ব্যবহারে ভোক্তা পেয়ে থাকেন পয়েন্ট। সেই পয়েন্ট খরচ করেই স্যাম হুয়াং বিমান, হোটেল এবং অন্যান্য খরচ মিটিয়েছেন!
বিমানে যারা নিয়মিত যাত্রা করেন তাদের জানা, প্রথম শ্রেণির বিমানের টিকেট বেশ ব্যয়বহুল। এটা সহজে পাওয়াও মুশকিল। কিন্তু স্যাম হুয়াং প্রথম শ্রেণির বিমানের টিকেট পেয়েছেন খুব সহজে, অল্প খরচে। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা থেকে জাপানের টোকিওতে যেতে গারুদা ইন্দোনেশিয়া এয়ারলাইন্সের বিমানের টিকেট কাটেন স্যাম হুয়াং। সচরাচর ইন্দোনেশিয়ার এয়ারলাইন্সের বিমানের প্রথম শ্রেণির টিকেট পেতে খরচ করতে হয় সাত হাজার ডলার। কিন্তু ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লায়ারের পয়েন্ট ব্যবহার করে ৬ হাজার ৯২৪ ডলার ডিসকাউন্ট পেয়েছেন স্যাম হুয়াং।
নিজের ৬০তম জন্মদিন পালন করতে বাবাকে নিয়ে দশদিনের সফরে জাপানে যান স্যাম হুয়াং। টোকিওতে টোকিও পার্ক হায়াত হোটেলে ওঠেন স্যাম হুয়াং। যেখানে এক রাতের জন্য খরচ করতে হয় এক হাজার ডলার। হোটেলটি বেশ জনপ্রিয়। কারণ, এ হোটেলেই শ্যুটিং করা হয়েছিল ‘লস্ট ইন ট্রান্সলেনস’ ছবিটির।
বেশ রাজকীয়ভাবে সফর শুরু করেন স্যাম হুয়াং। বিলাসবহুল মার্সিডিস বেঞ্জের গাড়িতে করে জাকার্তা বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয় হুয়াংকে। ফ্লাইট-ট্রিপ ব্লগে হুয়াং জানান, বিমানবন্দরে প্রথম শ্রেণির দুই কর্মকর্তা আন্তরিকভাবে তাকে স্বাগত জানান। তারা পাসপোর্ট ও ব্যাগগুলো গ্রহণ করেন। এরপর ইমিগ্রেশনের কাজ সেরে নিয়ে যাওয়া হয় প্রথম শ্রেণির যাত্রীর লাউঞ্জে। লাউঞ্জটি একটি ইয়ামাহা গ্রান্ড পিয়ানো দিয়ে সজ্জিত ছিল এবং দেয়াল ছিল রঙিন কাঁচে ঘেরা। যেখানে বিভিন্ন নকশা করা ছিল।
ফ্লাইটের ত্রিশ মিনিট পূর্বে সবার আগে হুয়াংকে নিয়ে যাওয়া হয় কেবিনে। তার কেবিনটি স্প্যানিশ এবং বেজ চামড়া দিয়ে আবৃত ছিল। বিমানে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে পেয়েছিলেন ওয়েলকাম ড্রিং। এরপর শুরু হয় তার খাতিরদারি। ফ্লাইটের আগেই তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, যে ধরণের খাবার খেতে আগ্রহী সেই ধরণের খাবার প্রস্তুত করে দিবে শেফ। কথা মতো কাজও করে তারা। তবে সকালের নাস্তায় ছিল বিমানের নিজস্ব খাবার। ওখানে পছন্দ করার সুযোগ ছিল না। যাত্রা শেষে তাকে সবার আগে নিয়ে যাওয়া হয় ইমিগ্রেশন অফিসে। সেখানে তার কাজ সেরে আবারও বিলাসবহুল গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় হোটেলে। শুধু এবারই না এর আগেও পয়েন্ট নিয়ে বিমানে চড়েছেন স্যাম হুয়াং। জাকার্তা থেকে সিঙ্গাপুর গিয়েছেন মাত্র ৪৮০ ডলারে। পয়েন্ট ছাড়া তাকে খরচ করতে হতো ১৬ হাজার ডলার।
টোকিও পার্ক হায়াত হোটেলের স্কাই লাউঞ্জে তার রুমের ব্যবস্থা করা হয়। যেখানে চাওয়ার আগেই সব কিছু পেয়ে যেতেন। তবে এক রাতের বেশি সেখানে থাকেননি তিনি। সব মিলিয়ে ১৮ হাজার ডলারের খরুচে সফরে স্যাম হুয়াং খরচ করেছেন মাত্র ৭৫০ ডলার + দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার পয়েন্ট। প্রায় ১৭ হাজার ডলার বাঁচিয়েছেন এ ব্যবসায়ী। জীবনটা এমন হলে আর কি লাগে।