নিউজ ডেস্ক:
বিদেশে গিয়ে পরিবার, পরিজন, আত্মীয়স্বজনের থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে কেমন দিশেহারা একটা অবস্থা হয়। টানা ১০ দিনের জন্য ঠিক তেমন অবস্থাতেই পড়তে চলেছে ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলে যাওয়া ইসরো ও নাসার ৬টি মহাকাশযান। ২২ জুলাই থেকে ১ অগস্ট পর্যন্ত তারা মঙ্গলে হয়ে পড়তে চলেছে একেবারেই অসহায়, নির্বান্ধব, স্বজনবিচ্ছিন্ন, অভিভাবকহীন। এবং সূর্যই তার কারণ। পৃথিবী আর মঙ্গলের মধ্যে যোগাযোগের সব ক’টি পথই ওই সময় রুখে দেবে সূর্য।
এই মুহূর্তে মঙ্গলে রয়েছে ইসরোর ‘মঙ্গলায়ন’ বা, ‘মার্স অরবিটার মিশন’ (মম)। যা ‘লাল গ্রহ’কে ঘিরে ঘুরে চলেছে তার বিভিন্ন কক্ষপথে। রয়েছে নাসার আরও তিনটি অরবিটার ‘মার্স ওডিসি অরবিটার’, ‘মার্স রিকনসাইন্স অরবিটার’ আর ‘মাভেন’। ওই তিনটিই বিভিন্ন কক্ষপথে ঘুরে চলেছে মঙ্গলের চার পাশে। রয়েছে নাসার দু’টি রোভারও। ‘অপরচ্যুনিটি’ ও ‘কিউরিওসিটি’। যারা মঙ্গলের মাটিতে নেমে তার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখছে, সেখানকার মাটি তুলছে, সেই মাটিতে কোন কোন পদার্থ মিশে রয়েছে, তা বিশ্লেষণ করছে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আগামী ২২ জুলাই থেকে ১ অগস্ট পর্যন্ত আমাদের নীলাভ গ্রহটি সূর্যের থেকে যে অবস্থানে থাকবে, ‘লাল গ্রহ’ চলে যাবে ঠিক তার উল্টো দিকে। পৃথিবী থেকে দেখলে মনে হবে, মঙ্গল একেবারেই সূর্যের পিছনে চলে গিয়েছে। ‘লাল গ্রহ’কে আড়াল করে দাঁড়িয়েছে সূর্য। জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায়, এই ঘটনাটাকে বলে- ‘মার্স সোলার কনজাঙ্কশন’। ২৬ মাস অন্তর বা দু’বছর দু’মাস অন্তর সূর্যের চার পাশে মঙ্গলের আবর্তনের স্বাভাবিক নিয়মেই এটা ঘটে।
আর এই স্বাভাবিক নিয়মই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় মঙ্গলে যাওয়া মহাকাশযানগুলির কাছে। বিজ্ঞানীদের কাছেও। কারণ, ওই সময় সূর্য আড়াল করে দাঁড়ানোয়, পৃথিবীর গ্রাউন্ড কন্ট্রোল রুম থেকে কোনও রকম কম্যান্ড পাঠানো যায় না মহাকাশযানগুলিকে। কোন কম্যান্ড পাঠানো হলে তা আদৌ পৌঁছবে না মঙ্গলে। যেহেতু ‘লাল গ্রহ’-এর সামনে তখন দাঁড়িয়ে রয়েছে সূর্য। একই কারণে, মঙ্গলে যাওয়া মহাকাশযানগুলিও তাদের জোগাড় করা তথ্যাদি, সিগন্যাল গ্রাউন্ড কন্ট্রোল রুমে পাঠাতে পারবে না, বাধাহীন ভাবে। মহাকাশযানগুলির পাঠানো সিগন্যালও বাধা পাবে, নানা ভাবে। যে কোন মহাকাশযানকেই প্রতি সেকেন্ডে বা সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ে একেবারে ‘মায়ের নজরে’ রাখে গ্রাউন্ড কন্ট্রোল রুম। মহাকাশে নানা রকমের বিপদ-আপদ রয়েছে। রয়েছে মহাজাগতিক রশ্মি সহ নানা রকমের জানা ও অজানা হানাদারির ভয়ও! তাই গ্রাউন্ড কন্ট্রোল রুমের ‘নজরের বাইরে’ চলে গেলেই মহাকাশযানগুলির বিপদ বেড়ে যায়। স্বাভাবিক ভাবে উদ্বেগ বেড়ে যায় বিজ্ঞানীদেরও।
সূত্র : আনন্দবাজার