নিউজ ডেস্ক:
নজির গড়েছিলেন তিনি। ইসলামি দুনিয়া তথা পাকিস্তানের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হয়ে। সাবেক পাক প্রধানমন্ত্রীর জন্ম হয়েছিল ১৯৫৩ সালের ২১ জুন। বেনজির ভু্ট্টোর অনন্য নজিরে ঢেকে গিয়েছে আরও একটি বিষয়। আজকের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সুখী দাম্পত্য জীবনের তিনিই কারিগর!
১৯৭১ সালের যুদ্ধে পরাজয়ের পর তখন পাকিস্তান সদ্য দ্বিখণ্ডিত। বিখ্যাত ‘সিমলা চুক্তি’র সময় এক পাক কিশোরীকে দেখা গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে। স্বাভাবিকভাবেই সেই কিশোরী মিডিয়া ফোকাস। পরাজিত, বন্দি পাকিস্তানের সেনাদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পাক রাষ্ট্রনায়ক জুলফিকার আলি সিমলায় এসেছিলেন। সেই কূটনৈতিক আসরে ছিলেন ভুট্টো কন্যা ভিভিআইপি অতিথি বেনজির।
সিমলা চুক্তির সময়ে কন্যাকে নিয়ে এসে চমক দিয়েছিলেন ভুট্টো সাহেব। ইচ্ছে ছিল মেয়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্যেই বেনজির ভুট্টোর পরবর্তী গন্তব্য ছিল লন্ডন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিক বিষয়ে পাঠরত সুশ্রী পাক কন্যা সফল হয়েছিলেন।
১৯৭৬ সালে অক্সফোর্ডের ছাত্রী বেনজির ভুট্টো। তাঁর সঙ্গেই পড়তেন সুশ্রী, উচ্চাকাঙ্ক্ষী থেরেসা মে। দুই বান্ধবীর মধ্যে সম্পর্কটা শুধুমাত্র ক্লাসের গণ্ডীর মধ্যে ছিল না। দু’জনেই নিজেদের ব্যক্তিগত কথা পরস্পরকে জানাতেন। সেই সূত্রে দীর্ঘাঙ্গী থেরেসা-র বিশেষ পছন্দের পুরুষটি কে তা জেনে ফেলেছিলেন বেনজির ভুট্টো।
অক্সফোর্ডে তখন ছাত্র নেতা ফিলিপ মে। তিনি ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ও কনজারভেটিভ পার্টির উদীয়মান নেতা। তাঁকেই পছন্দ করে ফেলেছিলেন থেরেসা। অন্তরের গোপন কথা বান্ধবী বেনজিরকে খুলে বলেন থেরেসা। স্মার্ট পাকিস্তানি কন্যা বুঝে নিয়েছিল সাগর পারের নীল নয়নার ইচ্ছে। দেরি করেনি। সরাসরি গিয়ে ফিলিপ মে-র কাছে থেরেসার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। দুবার ভাবেনি থেরেসার থেকে দু বছরের ছোট ফিলিপ। শুরু হল শতাব্দী প্রাচীন অক্সফোর্ডের রোমান্টিক ইতিহাসের এক পর্ব। ১৯৮০-তে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন ফিলিপ ও থেরেসা। সেই শুরু দীর্ঘ সময় পার করে দু’জনেই সুখী দাম্পত্য জীবন কাটাচ্ছেন। এই মুহূর্তে থেরেসা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
পড়া শেষে করে লন্ডন থেকে করাচিতে ফিরেছিলেন বেনজির ভুট্টো। পরিবারে ঘটেছিল বিপর্যয়। জেনারেল জিয়াউল হক দ্বারা সংঘটিত এক সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন জুলফিকার আলি ভুট্টো। এক ব্যক্তিকে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯৭৯ সালে সামরিক আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে।
বাবার মৃত্যুর পর রাজনীতিতে বিশেষ করে জড়িয়ে পড়েন বেনজির ভুট্টো। ১৯৯৩ সালে হন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। পরে পাক রাজনীতির ভবিষ্যত যা হয় তাই হয়েছিল বেনজিরের সঙ্গে। ক্ষমতা হারিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন। আট বছরের স্বেচ্ছা নির্বাসন কাটিয়ে ২০০৭ এর অক্টোবরে বেনজির পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন করেন। সেই বছরের ২৭ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডির এক নির্বাচনী সমাবেশ শেষে সভাস্থল ত্যাগ করার পর আত্মঘাতী হামলায় নিহত হন বেনজির ভুট্টো। চমকে গিয়েছিল বিশ্ব।
সংবাদটা পেয়েছিলেন সাগরপারে লন্ডনে থাকা থেরেসা। মনে কি লেগেছিল দোলা? যার কারণে তিনি সুখী দম্পতি, সেই ‘প্রাচ্যের কন্যা’ বেনজির তখন অতীত হয়ে গিয়েছেন। সময় পেরিয়েছে আর এক দশক। বেনজিরের মতোই আজ ক্ষমতার কেন্দ্রে থেরেসা। দ্বিতীয় নারী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হয়ে নজির গড়েছেন তিনিও। দুই বান্ধবীর প্রধানমন্ত্রী হওয়া-সেও তো এক নজির।
সূত্র: কলকাতা টোয়েন্টিফোর