নিউজ ডেস্ক:
বিয়ে ও অপহরণ বিষয় দুটি সম্পূর্ণ বিপরীত প্রেক্ষাপটের কিন্তু আফ্রিকার দেশ মালিতে সেটাই রীতিসিদ্ধ। সেখানে অপহরণ করে বিয়ে করাটাকে দীর্ঘ দিনের চলে আসা প্রথা হিসেবে গণ্য। যেখানে কনের ইচ্ছের কোনও বালাই নেই। পছন্দ হোক আর না হোক অপহরণকারীর সঙ্গেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় কনেকে।
থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে এমন অমানবিক তথ্য। ১৫ বছরের এক স্কুল ছাত্রী ‘ফাতামাতা’। গত বছর মালির মাহাউ নামক স্থানের একটি বাজার থেকে অপহরণের শিকার হয়। নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কায় পড়ে যায় ফাতামাতা। কিন্তু কিছুদিন পর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। তখন সে জানতে পারে তার অপহরণকারীকেই বিয়ে করতে হবে ফাতামাতার। সে এখন তার ভবিষ্যত নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কিত।
আর এ ঘটনার শুরুটা করেছিল ফাতামাতারই ভাই। অপহরণকারীর বোনকে এর আগে অপহরণের প্রথা অনুসরণ করে বিয়ে করে সে। প্রতিশোধ নিতেই পাল্টা ফাতামাতাকে অপহরণ করা হয়।
থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে ফাতামাতা বলে, ‘আমি খুবই ভীত, আমি সবসময়ই কাঁদি। আমি ওই লোকটাকে পছন্দ করিনা। এ রকম জোর পূর্বক বিয়ের রীতিকে আমি ঘৃণা করি। ‘
জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য মতে, পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে মালিতে বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি। ১৫-১৮ বছরের মধ্যেই প্রতি ৭ জনে একজন বাল্যবিয়ে করতে বাধ্য হন।
স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মীরা জানান, মালিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা অপহরণের পর বিয়ের প্রথা। এসব কন্যাশিশুকে জোর করে বিয়ের পর গৃহস্থালি কাজ করতে বাধ্য করা হয়। তাদের নিজেদের পরিবারে যেতে দেওয়া হয় না। খুব কম মেয়েদেরই ছেড়ে দেওয়া হয়।
ফাতামাতার চূড়ান্ত পরিণতি যদিও সুখকর, শেষ পর্যন্ত তাকে আর অমতে বিয়ে করতে হয়নি। তবে অনেককেই এ ভাগ্য মেনে নিতে হয়।
ফাতামাতা এক মাস অপহরণকারীর কাছে আটক থাকার পর স্থানীয় অধিবাসী ও স্কুল কর্তৃপক্ষের অক্লান্ত চেষ্টায় মুক্তি পায় সে। মুক্তির পর বাল্যবিবাহ ঠেকানোর প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে ফাতামাতা।
তার অভিব্যক্তি ছিল এরকম, ‘আমি স্কুলে ফিরতে পেরে খুবই খুশি। আমি আমার ভবিষ্যৎ ফিরে পেয়েছি। হয়তো একদিন নিজের পছন্দে বিয়েও করতে পারব।