হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন কখনো দোষারোপকারী ও নিন্দাকারী হতে পারে না, অভিসম্পাতকারী হতে পারে না, অশ্লীল কাজ করে না এবং কটুভাষীও হয় না। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৭৭)
যার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে মানুষ তাকে ত্যাগ করতে বাধ্য হয়, নবীজি (সা.) তাকে নিকৃষ্ট মানুষ বলেছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর নিকট আসার অনুমতি চাইলে তিনি বলেন, তাকে অনুমতি দাও। সে বংশের নিকৃষ্ট ভাই অথবা বলেন, সে গোত্রের নিকৃষ্ট সন্তান।
লোকটি ভেতরে এলে তিনি তার সঙ্গে নম্রতার সঙ্গে কথাবার্তা বললেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এ লোকের ব্যাপারে যা বলার তা বলেছেন। পরে আপনি আবার তার সঙ্গে নম্রতার সঙ্গে কথাবার্তা বললেন। তখন তিনি বললেন, হে আয়েশা! নিশ্চয়ই সবচেয়ে খারাপ লোক সে-ই, যার অশালীনতা থেকে বাঁচার জন্য মানুষ তার সংসর্গ পরিত্যাগ করে। (বুখারি, হাদিস : ৬০৫৪)
কথাবার্তায় কোমলতার ফজিলত
কথাবার্তায় কোমলতা ও নম্রতা মানুষের মহৎ চরিত্রের অন্যতম উপাদান। এর দ্বারা আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের পাশাপাশি মানুষের ভালোবাসাও অর্জন হয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা কোমল ও নম্র। তিনি কোমলতা ও নম্রতা ভালোবাসেন। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৬৮৯)
তা ছাড়া এর দ্বারা অতি সহজেই মানুষের মন জয় করা যায়। অন্যদিকে দুর্ব্যবহার, অসভ্য, রূঢ় ও কর্কশ আচরণ মানুষের নিকৃষ্ট চরিত্রের মারাত্মক উপাদান। এর দ্বারা আল্লাহর ঘৃণা অর্জনের পাশাপাশি মানুষের লাঞ্ছনা অর্জন হয়। মানুষের সঙ্গে শত্রুতা তৈরি হয় এবং ভালো সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে। বন্ধুবান্ধব কমে যায়।
কোরআনে কোমল আচরণের নির্দেশ
আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে যত নবী পাঠিয়েছেন, সবাই মিষ্ট ও কোমলভাষী ছিলেন। সবার সঙ্গে মুগ্ধতা ছড়ানো খোশমেজাজে কথা বলতেন। হোক সে মুসলমান কিংবা কাফির। সবার সঙ্গে কোমল ও নম্র আচরণ করার জন্য তাঁরা ছিলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশিত। যেমন—পথভ্রষ্ট ফেরাউন ঈমানের আলোকিত পথে আসবে না জেনেও আল্লাহ তাআলা মুসা ও হারুন (আ.)-কে ফেরাউনের কাছে পাঠানোর সময় কোমল ও নম্র আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন, যা কোরআনে এভাবে বিবৃত হয়েছে—‘তোমরা তার সঙ্গে কথা বলবে কোমলভাবে। ফলে সে কিছু চিন্তা-ভাবনা করতে বাধ্য হতে পারে এবং তার অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হতে পারে। ’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ৪৪)
বিদ্রুপের জবাবে কোমল আচরণ
গালির জবাবে গালি নয়, বিদ্রুপের জবাবে বিদ্রুপ নয়; বরং সব কিছুর মোকাবেলা করতে হবে উত্তম চরিত্র ও কোমল আচরণে। এর দ্বারা পরস্পরে শত্রুতা মিটে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব তৈরি হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জবাবে তা-ই বলো, যা উত্কৃষ্ট। তখন দেখবে, তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা আছে, সে-ও অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে গেছে। ’ (সুরা : হা-মিম সাজদা, আয়াত : ৩৪)
নবীদের প্রতি তাঁদের সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে বিদ্রুপের ঝড় এসেছে। কিন্তু তাঁরা প্রতিশোধ না নিয়ে উত্তম চরিত্র দিয়ে তা মোকাবেলা করেছেন। উন্নত চরিত্রের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। যেমন—হুদ (আ.)-এর প্রতি তাঁর সম্প্রদায়ের বিদ্রুপাত্মক আচরণ কোরআনে এভাবে আলোচিত হয়েছে—‘তুমি অথর্ব। তুমি নির্বুদ্ধিতার মধ্যে ডুবে আছো। আমরা তো মনে করি তুমি মিথ্যাবাদী। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৬৬)
এত বড় মানহানিকর কথার পরও হুদ (আ.) চরিত্রের সর্বোত্তম নমুনা দেখিয়ে কোমলতার সঙ্গে জবাব দিলেন—‘হে আমার জাতি! আমি নির্বোধ নই। আমাকে বিশ্ব প্রতিপালকের পক্ষ থেকে রাসুল হিসেবে পাঠানো হয়েছে। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৬৭)
সুতরাং আমাদের আচরণ হোক নবীদের আচরণের মতো কোমল, নম্র ও মাধুর্যপূর্ণ।