সিঙ্গাপুর বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সফল বাংলাদেশ মিশন
নিউজ ডেস্ক:‘বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলো রয়েছে ইতিবাচক ধারায়। সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ ব্যবসাবান্ধব। তাই সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীরা এ দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। সরকার যদি তাদের সুযোগ করে দেয়, তাহলে বাংলাদেশে একটি মিনি সিঙ্গাপুর বানাবেন দেশটির ব্যবসায়ীরা বলছিলেন সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশন (এসবিএফ) এর চেয়ারম্যান সিয়ং সেং টিও। গত সোমবার সোনারগাও লবিতে এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি প্রসঙ্গক্রমে বলেন সিঙ্গাপুর বিজনেস ফোরাম এর প্রতিনিধিদল এর আগেও বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ মিশনে এসছে। কিন্তু অন্যবারের থেকে এবারের সাফল্য অন্যরকম। কারণ এবার আমরা একইসাথে প্রধানমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী, বেজা (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ), বিডা (বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) ও এফবিসিসিআইসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের সাথে ফলপ্রসূ আলোচনা সম্পন্ন করেছি। তবে যে প্রসঙ্গটি উল্লেখ করা প্রয়োজন তাহলো এবারের মিশন ডেপুটি লিডার ও বিডিচ্যাম প্রেসিডেন্ট মি. সাহিদ এর ঐকান্তিক চেষ্টা এবারের বাংলাদেশ মিশন সাফল্যের এক ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের সাথে মি. সাহিদ এর সুস্পর্ক দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাগুলো অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে।
আলাপের একপর্যায়ে বাংলাদেশ মিশনের ডেপুটি লিডার সিঙ্গাপুর-ইন্ডিয়া কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি (এসআইসিসিআই)’র ভাইস চেয়ারম্যান প্রসুন মুখার্জি মিশন লিডার সিয়ং সেং টিও এর বক্তব্যে একমত পোষন করে বলেন বিশাল পৃথিবী আজ যোগাযোগের উন্নতির কারনে ছোট হয়ে এসেছে। বিশ্বায়নের এই সময়ে যার যোগাযোগ যত বিস্তৃত তার সাফল্য তত বেশি। বিডিচ্যাম প্রেসিডেন্ট মি. সাহিদ সিঙ্গাপুরের বিজনেস কমিউনিটি’র লিডার হিসেবে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি বরং তাঁর জন্মভূমির কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। তার সফল উদ্যোগ এবারের ‘মিশন টু বাংলাদেশ’ কয়েকধাপ এগিয়ে নিয়েছে।
এসবিএফ’র চেয়ারম্যান সিয়ং সেং টিও আরো বলেন, দেশে বেশ কয়েকটি খাতে বিনিয়োগ করতে চায় সিঙ্গাপুর। এরমধ্যে তথ্য ও প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পর্যটন, ফার্মাসিউটিক্যালস, আবাসন, গার্মেন্টস, জাহাজশিল্প ও সেবাখাতে আগ্রহের কথা জানিয়েছি। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন আগামী ৫-৬ বছরে বিদ্যুৎখাতে ৪০ বিলিয়ন বিনিয়োগ হবে। জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে আমাদেরও আগ্রহ রয়েছে।
আলাপের শেষের দিকে এসআইসিসিআই এর ভাইস চেয়ারম্যান প্রসুন মুখার্জি ‘চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৫০০ একর জমি সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের জন্য বরাদ্দ দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। প্রাথমিকভাবে সেখানে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করা হবে। এছাড়া আবাসন ও পর্যটন খাতে বিনিয়োগ হবে। সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের অর্থের সমস্যা নেই। প্রয়োজন জায়গা ও বিনিয়োগ পরিবেশ। এ দুটির নিশ্চয়তা পেলে উন্নত সব প্রযুক্তির সমন্বয়ে শিল্পনগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। সিঙ্গাপুরের সব সুযোগ-সুবিধা যেখানে বসেই পাওয়া যাবে বলেও উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, রফতানি বাণিজ্যের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে (জুলাই-ডিসেম্বর) সিঙ্গাপুর থেকে ১৪২ কোটি ৫৪ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য ও সেবা আমদানি করেছে বাংলাদেশ। বিপরীতে দেশটিতে ওই সময়ে বাংলাদেশ রফতানি করেছে মাত্র ১২ কোটি ৫৭ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য।
উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুরের আটত্রিশ সদস্যের একটি বাণিজ্য প্রতিনিধিদল ৫ দিনের সফরে গত ৭ জুলাই থেকে ঢাকায় অবস্থান করছে। সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশন (এসবিএফ) এর চেয়ারম্যান সিয়ং সেং টিও মিশন লিডার এবং বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার অব সিঙ্গাপুর (বিডিচ্যাম) এর প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব সাহিদুজ্জামান টরিক ও সিঙ্গাপুর ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর ভাইস চেয়ারম্যান প্রসুন মুখার্জি বাণিজ্য প্রতিনিধি দলটির ডেপুটি লিডার হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সিঙ্গাপুর বাণিজ্য প্রতিনিধিদলটির সাথে বাংলাদেশের বেসরকারী খাতের শীর্ষ বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পারস্পারিক আলোচনা চলছে।