বাছুর দেওয়ার কথা বলে ফটোসেশন করে হাতে খিচুড়ি ধরিয়ে দিল এনজিও

0
2

প্রকল্পের আওতায় হতদরিদ্র ১০ জন নারীকে ট্রেনিং শেষে একটি করে উন্নতজাতের গাভীর বাছুর দেওয়ার কথা ছিল। ট্রেনিং শেষে নারীদের হাতের বাছুর ধরিয়ে ছবি তোলা হয়। কিন্তু বাছুর দেওয়া হয়নি। পরে নারীদের খিচুড়ি দিয়ে বিদায় করেছে মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি এনজিও। এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের এনজিওর নির্বাহী পরিচালক এমএস আলম বাবলুর বিরুদ্ধে।

বাছুর না পেয়ে হতাশার কথা জানিয়েছেন দুস্থ নারীরা। তারা অভিযোগ করেন, ‘ফটোসেশনের দুই সপ্তাহ পার হয়েছে। কিন্তু এখনো তাদের বাছুর বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। প্রকল্পের পুরো টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।’

ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৩০ ডিসেম্বর সকালে বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের (বিএনএফ) আর্থিক সহায়তায় মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থা এনজিওর উদ্যোগে ১০ জন দুস্থ নারীকে গাভীর বাছুর দেওয়ার কথা বলে রেলবাজারে নিয়ে আসা হয়। নিজের পরিচিত একটি খামার থেকে ১০টি গাভীর বাছুর গাড়িতে করে নিয়ে আসেন এনজিওটির নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলু। এরপর এলাকার কিছু ব্যক্তিকে তার বাসভবন সংলগ্ন এনজিওর সামনে ডেকে এনে ১০ জন নারীকে দাঁড় করিয়ে গরু দেওয়ার ফটোসেশন করেন। পরে ওই সব নারীদের গাভীর বাছুর না দিয়ে খিচুড়ি আর ডিম খাইয়ে বিদায় করা হয়।

কুবিরদিয়ার মাঠপাড়া গ্রামের আলম হোসেনের মেয়ে খুশি খাতুন বাবার বাড়িতে এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে বসবাস করেন। অন্যের বাড়িতে ও মাঠে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান। তিনি বলেন, ‘ট্রেনিং এর কথা বলে আমাকে ডেকে নিয়ে আসছে। গাভীর বাছুর হাতে ধরিয়ে ছবি তোলে। কিন্তু আমাকে গাভীর দেয় নাই। বলছে এবার অন্য এলাকার লোকদের দেব, পরেরবার তোমাকে দেব। পরে খিচুরি ডিম খাওয়ায়ে বিদায় করছে।’

অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করে সংসার চালানো এক গৃহবধূ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের গাভী দেওয়ার কথা বলে ট্রেনিং ডেকে নেয়। তারপর ট্রেনিং শেষে আমাদের বাছুর হাতে দিয়ে ছবি তুলে বিদায় করেছে। ট্রেনিংয়ে আমরা বিভিন্ন গ্রামের ১০ জন মহিলা ছিলাম।’

যে গাড়িতে গরুর বাছুরগুলো আনা নেওয়া করেছে সেই গাড়িচালক শুভ দাস বলেন, ওইদিন আমার গাড়ি নিয়ে মথুরাপুর এলাকার একটি গরুর খামার থেকে ১০টা বাছুর নিয়ে রেলবাজার বাবলু সাহেবের বাসার সামনে নেয়। পরে অনুষ্ঠান শেষে ওখান থেকে ওই বাছুরগুলো আবার মথুরাপুরের একই খামারে নামিয়ে দেওয়া হয়। এর বেশি কিছু জানা নেই।

এনজিও মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলু বলেন, ‘আমরা ১০ জন ছাড়াও আরও কয়েকজনকে ডেকেছিলাম। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ১০ জনকে গাভীর বাছুর দেওয়া হয়েছে। বাকিদের পরের প্রকল্পে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।’

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, আমাকে অতিথি করে দাওয়াত দিয়েছিলেন, কিন্তু ব্যস্ততার কারণে যেতে পারিনি। প্রকল্পটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা নেই। তবে আমার অফিসে প্রত্যয়ন দেওয়ার কথা রয়েছে। তিনি প্রত্যয়ন নেওয়ার জন্য রিপোর্ট অফিসে জমা দিয়েছেন কি না দেখে বলতে পারব। তবে এরকম অভিযোগ থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে সে মোতাবেক প্রত্যয়ন দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের (বিএনএফ) উপ-মহাব্যবস্থাপক (কর্মসূচি) মোস্তফা কামাল ভূঞা বলেন, আমরা বিষয়টি পর্যক্ষেণ করছি। রিপোর্ট আসার পর যাচাই-বাছাই করে দেখব, ঘাপলা পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।