মুরগীর বাঁচ্চা, খাবার, ওষুধ ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দামুড়হুদায় মুরগী চাষ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে করে বেকার হয়ে পড়ছেন খামারীরা। শুধুমাত্র উপজেলার দর্শনা থানাধীন পারকৃষ্ণপুর-মদনা গ্রামেই ২৫-২৬ জন খামারী প্রায় ৩০ হাজার মুরগী চাষ করতেন। তবে গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে সেখানে মাত্র এক থেকে দেড় হাজার মুরগী চাষ হচ্ছে।
মদনা গ্রামের দাউদ আলীর ছেলে মুরগী খামারী আব্দুর রশিদ জানান, তিনি ১৭-১৮ বছর ধরে মুরগী চাষ করে আসছেন। গত ৬-৭ মাস ধরে মুরগীর চাষ বন্ধ করে দিয়ে বেকার হয়ে আছেন। বন্ধ করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুরগীর বাঁচ্চা, খাবার, ওষুধ ও বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যাওয়ায় মুরগী চাষে লাভ হচ্ছে না। বর্তমানে পাইকারি বাজারে মুরগীর দাম ১২০ থেকে ১২৫ টাকা প্রতি কেজি, যা উৎপাদন খরচের থেকেও কম হওয়ায় লোকশান গুনতে হচ্ছে। তিনি জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে ১ হাজার ৫০০ মুরগী ক্রয় করে লালন-পালন করলে প্রায় ২ লাখ টাকা লোকসান হবে। বেকার না থেকে গত কয়েকদিন আগে তিনি তার খামারে ২৫০টি মুরগী নিয়ে আবার চাষ শুরু করেছেন, লাভ হয় কি না দেখার জন্য।
মদনা গ্রামের পশ্চিম পাড়ার ঘনু মণ্ডলের ছেলে ফরহাদ হোসেনের ফার্মে বর্তমানে ৯০০টি মুরগী রয়েছে। বাজার দর কম হওয়ায় বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যেখানে ১ হাজার ৫০০ মুরগী পালনের জন্য ৩৫ দিনে ৮০ বস্তা খাবার লাগে, প্রতি বস্তার মূল্য ৩ হাজার ৬০০ টাকা, বিদ্যুৎ বিল ৪ হাজার টাকা এবং ওষুধের খরচ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। মোট খরচ হয় ৪ লাখ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা, অথচ মুরগী বিক্রি করে পাওয়া যায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা। ফলে ব্রয়লার ও সোনালী মুরগী চাষে লাভের চেয়ে লোকসান বেশি হচ্ছে। অনেক খামারী মুরগীর চাষ বন্ধ করে এখন বেকার হয়ে পড়েছেন।
দামুড়হুদা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নীলিমা আক্তার হ্যাপির সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বড় বড় মুরগী খামারীরা নিজেরাই মুরগীর খাবার এবং মেডিসিন উৎপাদন করছেন, ফলে তারা কম দামে বাজারে মুরগী বিক্রি করতে পারছেন। কিন্তু ছোট খামারীরা বেশি দামে খাবার ও ওষুধ কিনে মুরগী চাষ করে লাভবান হতে পারছেন না। যে কারণে ছোট খামারীরা বড় বড় খামারীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না।
তিনি জানান, বর্তমানে দামুড়হুদা উপজেলায় ৯টি ব্রয়লার খামার, ১৮টি সোনালী মুরগী খামার, ২টি লেয়ার খামার রেজিস্ট্রেশনভুক্ত আছে। এছাড়া ৬টি ব্রয়লার মুরগী ও ৮৬টি সোনালী মুরগী খামার রয়েছে, যেগুলো রেজিস্ট্রেশনবিহীন। এর মধ্যে ১৪ থেকে ১৫টি খামার বন্ধ রয়েছে।