নিউজ ডেস্ক:
রাজশাহী বিএনপির নতুন যুগ শুরু হলো। দুই যুগ ধরে রাজশাহী মহানগর ও জেলার নেতৃত্বে থাকা আলোচিত দুই নেতা মিজানুর রহমান মিনু ও নাদিম মোস্তফাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে আনা হয়েছে নতুন নেতৃত্ব। গতকাল রাজশাহী মহানগর ও জেলায় নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলনকে সাধারণ সম্পাদক করে ২১ সদস্যের রাজশাহী মহানগর (আংশিক) কমিটি ঘোষণা করে বিএনপি। একইভাবে অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন তপুকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট এ কে এম মতিউর রহমান মন্টুকে সাধারণ সম্পাদক করে রাজশাহী জেলার ৩৭ সদস্যের (আংশিক) কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে রাজশাহীতে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
মিনু-নাদিমকে এখন কেন্দ্রীয় ‘অগুরুত্বপূর্ণ’ পদেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। এর আগে মিজানুর রহমান মিনু ছিলেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি। তাকে করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। আর নাদিম মোস্তফা ছিলেন রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি। তাকে করা হয়েছে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। গতকাল বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশক্রমে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কমিটি অনুমোদন করেছেন। ’ নতুন এই নেতৃত্বের উত্থানে দলের প্রবীণ নেতা অ্যাডভোকেট কবীর হোসেন ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নীরব সমর্থন রয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতারা। রাজশাহী বিএনপির আলোচিত দুই রাজনীতিবিদ মিজানুর রহমান মিনু ও নাদিম মোস্তফা। এ কমিটি ঘোষণার ফলে অন্তত দুই যুগ ধরে একক নেতৃত্ব ধরে রাখা মিনু ও নাদিমের আধিপত্যের অবসান ঘটল বলে মনে করছেন স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা। একইভাবে মহানগরে বরখাস্ত হওয়া মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপুর উত্থান ঘটল। তারা দুজনই নগর ও জেলা যুবদলের সভাপতি ছিলেন। জানা যায়, ঘোষিত নতুন কমিটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে রাজশাহীতে। বিএনপির একপক্ষ বলছে, দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব আঁকড়ে রাখা ও বিগত বছরগুলোয় আন্দোলন-সংগ্রামে গা বাঁচিয়ে চলার কারণে স্থানীয় রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো মিনু-নাদিমকে। এতে দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা খুশি। তাদের ধারণা, এবার তরুণ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। আন্দোলন সংগ্রাম জমে উঠতে পারে। অন্যপক্ষ বলছে, আলোচিত দুই নেতা মিনু-নাদিম রাজশাহীর রাজনীতিতে ফ্যাক্টর। তাদের মানের নেতা এখন বিএনপিতে নেই। গুরুত্বপূর্ণ নগরীতে মিনু-নাদিমের মতো চৌকস নেতার প্রয়োজন। তাদের কারণেই এত বছর ধরে এখানে বিএনপির আধিপত্য রয়েছে। তাদের সরিয়ে দেওয়ায় হতাশা বিরাজ করছে দলের বড় অংশে। নতুন কমিটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, নাদিম মোস্তফাকে মাইনাস করে দেওয়া জেলা কমিটির জন্য ভালোই হয়েছে। তিনি তার কর্মকাণ্ডের জন্য পদ হারিয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবু সাইদ চাঁদ বলেন, এ কমিটিও আশানুরূপ হয়নি। মাঠের রাজনীতিতে না থেকেই পদ পেয়েছেন। জানা গেছে, জেলা কমিটির বিরুদ্ধে শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করবেন চাঁদ। জেলা কমিটির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপুকে নিয়ে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তার এই উত্থানকে বিএনপি নেতারা মনে করছেন, ‘অতি পুরস্কার’ হিসেবে। একাধিক নেতা জানান, দল ক্ষমতায় থাকতে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন তিনি। একইভাবে সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া মতিউর রহমান মন্টুর সঙ্গেও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের তেমন সম্পর্ক নেই। ফলে জেলা কমিটি স্থবির একটি কমিটি হবে বলে তাদের ধারণা। তবে জেলা বিএনপির নতুন সভাপতির পদ পাওয়া তোফাজ্জল হোসেন তপু জানান, তিনি সব সময় মাঠে ছিলেন। কেন্দ্র এসব মূল্যায়ন করেই দায়িত্ব দিয়েছে। আগামীতে সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে দলকে শক্তিশালী করতে কাজ করতে চান। এদিকে মিনুর সঙ্গে বুলবুলের সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় বুলবুলকে পাশ কাটিয়ে মহানগর যুবদলের কমিটি দেওয়া হয়। এসব কারণেই রাজশাহীর রাজনীতি থেকে মিনু-নাদিমকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতারা। তবে নগর বিএনপির রাজনীতিতে মিনু যুগের অবসান হলেও বুলবুলের পদ পাওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ মিনু সমর্থকরা। তারা শফিকুল হক মিলনকে সভাপতি হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে গতকাল বিকালে দলীয় কার্যালয়ে উত্তেজনাও দেখা গেছে। এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি মেয়র (সাময়িক বরখাস্ত) মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসন ভেবেচিন্তেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ নিয়ে কারও কিছু বলার থাকতে পারে না।