নিউজ ডেস্ক:
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দ্বিতীয় ভৈরব ও তিতাস রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ দুটি সেতুটির কাজ শেষ করে ট্রেন চলাচলে সর্বনিম্ন আরো ১০-১৫ মিনিট সময় কমবে বলে জানান রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া ডাবল লাইনে ক্রসিং ছাড়াই ট্রেন চলাচলের পাশাপাশি পণ্য পরিবহনের সময় এবং যাত্রী হয়রানিও কমবে। বাড়বে ট্রেনের সংখ্যাও। এ দুটি সেতু দিয়ে চলাচল শুরু হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে। এর আগে গত ১ মার্চ থেকে আন্তঃনগন সকল ট্রেনের ৫ মিনিট থেকে ৬৫ মিনিট পর্যন্ত সময় কমানোর আদেশ জারি করে টাইম টেবিল বইয়ের সময়সূচি সংশোধন করা হয়েছে। এ নিয়ে চলাচলরত ভ্রমনকারীদের সময় কমানোর পাশাপাশি সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে আরো একধাপ।
এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে টঙ্গী থেকে ভৈরববাজার স্টেশন পর্যন্ত ডাবল রেললাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হয় গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে। এই ডাবল লাইন চালুর ফলে এই অংশে এখন প্রতিদিন আন্তঃনগর ট্রেনসহ ৮৪টি ট্রেন চলাচল করছে। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেটসহ পূর্বাঞ্চলের রেলপথে বিভিন্ন ট্রেনের যাত্রা সময়ও অনেকাংশে কমেছে বলে রেলের টাইম টেবিল বই সূত্রে জানা গেছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ও ভৈরব সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী মো. আবদুল হাই বলেন, ‘রেলওয়ে এপ্রোচসহ ৯৫৯ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সেতু দুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে ১৩৩ কোটি টাকা দিবে সরকারি তহবিল (জিওবি) ও ৮২৬ কোটি ২০ লক্ষ টাকা অর্থায়ন করেছে ভারতীয় ঋণ সহায়তা (এলওসি)। ইতিমধ্যে সেতু দুটির ৯৫ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ভৈরব সেতু ও তিতাস সেতু চালু হলে আরো কমপক্ষে ১০ মিনিট সময় কমবে। এছাড়াও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও সেতু দুটি যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে তিনি জানান।
রেলওয়ে সূত্র জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-নোয়াখালীসহ পূর্বাঞ্চলীয় জোনে সরাসরি রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে ১৯৩৭ সালে মেঘনা নদীতে প্রথম সেতু নির্মিত হয়। দীর্ঘ ৮০ বছর পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ডাবল লাইন নির্মাণের সুফল তুলতে দ্বিতীয় ভৈরব সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। পুরাতন ও নতুন দুটি সেতু দিয়েই ট্রেন চলাচল করবে। একটি দিয়ে ডাউন ট্রেন অপরটিতে আপ ট্রেন চলাচল করবে। সেতুগুলো যাতে ডুয়েল গেজ হিসেবে ব্যবহার করা যায় এজন্য সেতুর উপর ডুয়েল রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে। রেলওয়ে এপ্রোচসহ দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদিত হয় ২০১০ সালের ৯ নভেম্বর। ১২টি পিলার ও নয়টি স্প্যান বিশিষ্ট ৯৮৪ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাত মিটার প্রস্থের ভৈরব সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬৭ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা। ২০১৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইরকন-এফকন জেভি’র সাথে ভৈরব সেতু নির্মাণে চুক্তি হয়। একই বছরের ২৫ ডিসেম্বর প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রথম দফায় গত বছরের ডিসেম্বরে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দ্বিতীয় ধাপে মেয়াদ বাড়িয়ে তা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। একইভাবে ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তিতাস সেতু নির্মাণের চুক্তি হয় নিয়োজিত ঠিকাদার গ্যানন-এফএলসিএলের সাথে। ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ১৯১ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে তিতাস সেতুটি।
সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এমপি নির্মাণাধীন সেতু দু’টি পরিদর্শন করেন। এ প্রকল্প পরির্দশকালে আরো উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রনালয়ের সচিব ফিরোজ সালাউদ্দিন, রেলওয়ে মহাপিরচালক (ডিজি) মো. আমজাদ হোসেন. পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ও সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী আবদুল হাইসহ মন্ত্রনালয়ের ও রেলের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ।