ঝিনাইদহের সরকারি হাসপাতালগুলোতে নেই অ্যান্টিভেনম ভ্যাকসিন
নিউজ ডেস্ক:বর্ষা মৌসুমে সাপের উৎপাত বৃদ্ধি পেলেও ঝিনাইদহের সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে নেই অ্যান্টিভেনম ভ্যাকসিন। ফলে সাপে কাটা রোগীর অকাল মৃত্যু ঘটছে। অনেকে বাধ্য হয়ে নিচ্ছে অপচিকিৎসা।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, গত দুই মাসে সাপের কামড়ে এ জেলায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, একের পর এক বিষধর সাপের কামড়ে মানুষ মারা গেলেও জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে নেই কোনো অ্যান্টিভেনম বা প্রতিষেধক ভ্যাকসিন। ঝিনাইদহের ছয় উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাপের কামড়ে মারা যাওয়া উপজেলা হচ্ছে শৈলকুপা। সম্প্রতি শৈলকুপায় এক পরিবারের দুই সহোদরের সাপের কামড়ে মৃত্যু হলে অ্যান্টিভেনম ভ্যাকসিনের দাবিতে শৈলকুপায় নানা পেশার মানুষ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল হাই অ্যান্টিভেনম ভ্যাকসিন প্রদান করলেও সংরক্ষণ ব্যবস্থা ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় অ্যান্টিভেনম ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে সাপে কামড়ালে এখন প্রায় এক শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ফরিদপুর অথবা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।
সর্বশেষ ৪ অক্টোবর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সাপের কামড়ে রমজান আলী (৫০) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের মৃত ভাগাই সরদারের ছেলে। এর আগে ৩ অক্টোবর ঝিনাইদহের শৈলকুপায় বিষাক্ত সাপের ছোবলে বগদিয়া গ্রামের দবির উদ্দিনের ছেলে হাসান উদ্দিন (৯), ১৮ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহের হরিণাকু-ুতে ভানুমতি বিশ্বাস, ১৭ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহের শৈলকুপায় শাহিন হোসেন (৩২) ও তাঁর ছোট ভাই সোহাগ হোসেন, ১৬ সেপ্টেম্বর সোমবার একই উপজেলার যুগনী গ্রামে বিলকিস বেগম (৩২), ৬ সেপ্টেম্বর কোটচাঁদপুরে মরিয়ম খাতুন, ৩ সেপ্টেম্বর শৈলকুপার মাধবপুর গ্রামের স্বরুপ কুমার বিশ্বাস, ২১ আগস্ট সদর উপজেলায় পলিয়ানপুর গ্রামে সাকিব হোসেন এবং ২৯ মে ঝিনাইদহের আব্দুস সোবাহান (৪৫) সাপের কামড়ে মারা যান।
ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. প্রসেনজিত বিশ^াস পার্থ জানান, ‘সাপের কামড়ের ভ্যাকসিন সহজলভ্য নয়। আমাদের দেশে অ্যান্টিভেনম উৎপাদন হয় না। বাইরের দেশ থেকে আনা হয়। বাংলাদেশি ওষুধ কোম্পানি ইনসেপ্টা অ্যান্টিভেনম বাজারজাত করলেও চড়া দামের কারণে ওষুধ ব্যবসায়ীরা ফার্মেসিতে তা রাখেন না। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ১০ সেট অ্যান্টিভেনম আছে। তবে ভ্যাকসিন থাকলেও অভিজ্ঞ নার্স ও ডাক্তারের স্বল্পতা রয়েছে। এ ছাড়া সাপে কাটা রোগীদের শেষ সময়ে হাসপাতালে আনা হয়। যে কারণে বেশির ভাগ সময়ই সঠিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না।’
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ড. সেলিনা বেগম জানান, ‘আমাদের দেশে ২০ ভাগ মানুষ বিষধর সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয়। বাকি ৮০ শতাংশ মানুষ সাধারণ সাপের কামড়ে শিকার হয়। এর মধ্যে অনেকে ভয়ে স্ট্রোক করে মারা যায়। তবে সাপে কামড়ানোর পর তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে এলে সহজে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।’