দিনাজপুর প্রতিনিধি –
দিনাজপুরে দীর্ঘ ১০ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বীরগঞ্জ উপজেলা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বীরগঞ্জ সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন দিনাজপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। প্রধান বক্তা ছিলেন দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল।
বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ২৬ জুলাই মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় জাতীয় সঙ্গীতের তালে তালে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের প্রশাসক আজিজুল ইমাম চৌধুরী এবং বেলা ৩ টায় সম্মেলনের ২য় পর্বে কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত শুরু হয়।
বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব জাকারিয়া জাকার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলতাফুজ্জামান মিতা, যুগ্ম সম্পাদক মির্জা আশফাক হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারুকুজ্জামান চৌধুরী মাইকেল, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক তরিকুল আলম প্রমুখ।
বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক অধ্যক্ষ মো. খয়রুল ইসলাম চৌধুরী। সঞ্চালনায় ছিলেন বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুর ইসলাম নুর।
সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বজলুল হক, আলাউদ্দিনসহ এর সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি তার বক্তব্যে বলেন, নাম ত্রি-বার্ষিক, কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর পর হচ্ছে বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সম্মেলনের মাধ্যমে যেই নেতৃত্বে আসুক না কেন, তার কারণে যেন দল প্রশ্নবিদ্য না হয়। বর্তমানে চালাক কর্মী দিয়ে দল ভরে গেছে। যে যার মত চালাকি করছে। তিনি বলেন, যে দলটির কারণে দেশ স্বাধীন হয়েছে। সমাজের এমন কেউ নাই যাদের নিয়ে ভাবেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেশ কয়েকটি পর্যায়ে ভাতা দিয়ে মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন করছেন তিনি।
বাংলাদেশকে অনেক ভালো জায়গায় নিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দিয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগ এত কিছু করার পরেও মির্জা ফখরুলরা বলেন, তত্বাবধায়ক সরকারে ভোট দেন। তারা বলেন, দেশ শ্রীলঙ্কার মত হবে। অমার মনে হয়, দেশ শ্রীলঙ্কার মত হলে বিএনপি খুশি হবে।
কিন্তু তারা যানে না শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশ কখনও শ্রীলঙ্কার মত হবে না। কারণ শেখ হাসিনার হৃদয় দেশ প্রেমে ভরা।
সম্মেলনের প্রধান বক্তা মনোরঞ্জন শীল গোপাল এমপি তার বক্তব্যে বলেন, অনেক সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। যার উদাহারণ আমার নির্বাচনী এলাকা। আগের তুলনায় বীরগঞ্জ-কাহারোল উপজেলা অনেক এগিয়ে গেছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। তিনি বলেন, বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগকে এমন শক্তিশালী হতে হবে যাতে কোন অপশক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।
দিনাজপুরে তুলা বীজ খামারের সীমানা প্রাচীর
নির্মান নিয়ে সংবাদ সম্মেলন
দিনাজপুর প্রতিনিধি ঃ দিনাজপুরের সদরপুর গ্রামবাসীর চলাচলের জন্য ২ শত মিটার রাস্তা উন্মুক্ত রেখে কয়েক হাজার গ্রামবাসীর চলাচলের একমাত্র সড়ক রক্ষার দাবীতে ২৬ জুলাই মঙ্গল দিনাজপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সদর উপজেলার সদরপুর গ্রামের অসহায় মানুষের সংবাদ সম্মেলন।
আয়োজিত সম্মেলনে গ্রামবাসীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মো. সেলিম আখতার। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা দিনাজপুর সদর উপজেলাধীন ২নং সুন্দরবন ইউনিয়নের সদরপুর গ্রামের অধিবাসী। সদরপুর গ্রামে বসবাসরত প্রায় দুই শত পরিবারের পক্ষে এই সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছি। আমরা সদরপুরের যে জায়গায় বসবাস করছি তা সদরপুরের তুলা বীজ বর্ধন খামারের উত্তর দিকে অবস্থিত। ১৯৮৪ সালে ভূমি হুকুম দখলের মাধ্যমে এই খামারের কার্যক্রম শুরু করা হয়। ভূমি হুকুম দখলের সময় ৭০-৮০ বছরের বেশি সময় হতে ব্যবহৃত প্রায় ২০০ মিটার লম্বা রাস্তাটিও হুকুম দখল করা হয় এবং স্থানীয় অনেক বাসিন্দার বাড়ি-ঘর উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদকৃত পরিবারগুলো ক্ষতিপুরণ না পেয়ে বর্তমানে অতি মানবেতর জীবন যাপন করছে।
যে ২০০ মিটার রাস্তার কথা বলছি তা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ২৫-৩০ বছর আগের থেকে রাস্তা হিসেবেই ব্যবহার হয়ে আসছে। সদরপুর গ্রামের বসবাসকারি দেড় হাজার লোকসহ আশেপাশের প্রায় তিন হাজার মানুষ দশমাইল হতে সৈয়দপুরগামী মূল সড়কে আসা-যাওয়ার জন্য ঐ রাস্তা ব্যবহার করে থাকেন। মাত্র ২০০ মিটার রাস্তার কোথাও কোন বাঁক নাই। সর্বশেষ ভূমি জরিপকালেও রাস্তাটিকে রাস্তা হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমানে তুলাফার্ম কর্তৃপক্ষ তাদের হুকুম দখলকৃত এরিয়ায় প্রাচীর নির্মানের জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করেছেন। ইট, বালুসহ নির্মান সামগ্রী জমা করেছেন। আমরা জেনেছি যে, তারা রাস্তাটিও প্রাচীর দ্বারা ঘিরে নিবেন এবং একটি বিকল্প রাস্তা ছাড়বেন। কিন্তু তারা যেভাবে বিকল্প রাস্তা দিতে চান, সেটা মোটেও গ্রহনযোগ্য নয়। আমরা এখন যেখানে মাত্র ২০০ মিটার পাড়ি দিয়ে মূল সড়কে আসা-যাওয়া করতে পারছি, সেখানে বিকল্প রাস্তায় এক থেকে দেড় কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিতে হবে। মাত্র ২০০ মিটারের পরিবর্তে এক- দেড় কিলোমিটার ঘুরিয়ে দেয়া যুক্তিহীন। তদুপরি বিকল্প রাস্তা খুব বেশি প্রশ্স্ত হবে না এবং রাস্তাটিতে ৮-১০টি বাঁক থাকবে।
এই সমস্ত অসুবিধা নিয়ে সদরপুরের মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা দূর্বিসহ হয়ে পড়বে। তাই আমাদের দাবী তুলা ফার্ম কর্তৃপক্ষ মাত্র ২০০ মিটারের রাস্তাটি ছেড়ে দিয়েই যেন প্রাচীর নির্মান করেন। পাশাপাশি হাজিপাড়া গ্রামের উত্তর-পূর্বে ও পূর্ব-পশ্চিমে প্রাচীর তোলার সময় প্রাচীর বরাবর ১০ ফুট রাস্তা ছেড়ে তা উক্ত ২০০ মিটারের রাস্তা সাথে সংযুক্ত করার জন্যও আমরা আবেদন জানাচ্ছি।
আমরা এই দাবী জানিয়ে একাধিকবার দিনাজপুরে ও ঢাকায় তুলা বোর্ড কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি। লিখিত পত্রেও আহ্বান জানিয়েছি যে, বাপ-দাদার আমল হতে ব্যবহার হওয়া রাস্তা বাদ দিয়েই যেন প্রাচীর নির্মান করা হয়।
আমরা বলেছি, পাকিস্তান সৃষ্টির সময় হতে এই রাস্তা ব্যবহার হয়ে আসছে এবং রাস্তা বন্ধ করা অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরনের সমতুল্য হবে। আইনের দিক থেকেও কখনো কোন রাস্তা বন্ধ করা যায় না। এমন যুক্তি দেয়ার পরেও কর্তৃপক্ষ আমাদের কথায় সাড়া দেয় নাই এবং আমাদের লিখিত স্মারক পত্র রিসিভ করে নাই। ২০২১ সালের ১৫ মার্চ তারিখে আমরা তুলা ফার্মকে লিখিত পত্র দিয়েছিলাম, যে পত্রে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যানের সুপারিশ ছিল। তারা সেটি নিলেও কোন রিসিপ্ট সাক্ষর দেয় নাই। মূলত তারা গ্রামবাসীর কোন কথাই শুনছেন না।
এই কারনে আমরা সদর ইউএনও বরাবর গত ৯ জুন ২০২২ ও ১৮ জুলাই ২০২২ তারিখে লিখিত স্মারকলিপি দিয়েছি। রাস্তাটি খোলা রাখার দাবী জানিয়ে মাননীয় জেলা প্রশাসক বরাবরেও গত ২০ জুলাই ২০২২ তারিখে স্মারকলিপি দিয়েছি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, তুলা বর্ধন খামার ভাল ভাবে চলুক, বড় প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠুক এতে আমাদের কোনো আপত্তি নাই।
আমাদের দাবী হলো একটাই, বাপ-দাদার সময়কাল হতে তথা পাকিস্তান আমল হতে যে ২০০ মিটার রাস্তা সদরপুর গ্রামবাসী ব্যবহার করছেন তা যেন প্রাচীরের বাইরে রাখা হয়। রাস্তা বাদ দিয়ে খামারের বাকি জায়গা প্রাচীর দ্বারা ঘিরে নিলে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না। আমরা এ বিষয়ে মাননীয় হুইপ মহোদয়েরও মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগীতায় রাস্তাটি সদরপুর গ্রামবাসীর চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখার দাবী জানাচ্ছি। এসময় গ্রামবাসীর পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন,মো: হোসেন আলী, মো: মজিবর রহমান ও মো: বাবু সরকার প্রমুখ।