ডিস্ক প্রলেপস কাদের বেশি হয়?

0
7
মেরুদণ্ডের সমস্যা, পিঠে ব্যথা, কাঁধে ব্যথা সাধারণ একটি সমস্যা। প্রায় সবাই বয়সের একটি পর্যায়ে এসে এ সমস্যায় ভুগতে পারেন। অনেক কারণেই মেরুদণ্ডের সমস্যা হটে পারে। মেরুদণ্ডের সমস্যার নানা রকমফের রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো ডিস্ক প্রলেপস।

ডিস্ক প্রলেপস কি ?
আমাদের মেরুদন্ডের হাড় গুলোকে বাংলায় বলা হয় কশেরুকা ও মেডিকেল পরিভাষায় বলা হয় ভাট্রিব্রারা, মেরুদন্ডের দুইটি কশেরুকার মধ্যে ফাঁকা থাকে  যেখানে এক ধরনের ডিস্ক থাকে যাকে ইন্টার ভার্টিব্রাল ডিস্ক বলে। এই ডিস্ক যখন তার জায়গা থেকে সার যায় তখন তাকে ডিস্ক প্রলেপস বলে।

ডিস্ক প্রলেপস কেন হয় ?
অনেকগুলি কারনে ডিস্ক প্রলেপস হতে পারে। যেমন-

১। আমাদের মেরুদন্ডের সাথে যে স্পাইনলে লিগামেন্ট ও মাংসপেশি থাকে এগুলি দুর্বল হয়ে গেলে।

২। অসচেতন বা ভুল ভাবে সামনের দিকে ঝুকে ভারী কিছু উঠাতে গেলে।

৩। আঘাত পেলে বা উচু স্থান থেকে পড়ে গেলে ।

৪। দীর্ঘক্ষন নীচে বসে কাজ করলে

৫। এমনকি সামনের দিকে ঝুকে জুতার ফিতা বাধতে গেলে অথবা বেসিনে মুখ ধুতে  গেলেও ডিস্ক প্রলেপস হতে পারে।

ডিস্ক প্রলেপস কোথায় কোথায় হয়ে থাকে ?

সাধরন ডিস্ক প্রলেপস আমাদের ঘাড় বা সারভাইক্যাল স্পাইন ও কোমর বা লাম্বার স্পাইনে বেশী হয়ে থাকে। সারভাইক্যাল স্পাইনের সি ৫- ৬ ও সি ৬-৭ লেভেলে ও লাম্বার স্পাইনে এল ৪-৫  ও এল ৫ – এস ১ লেভেলে বেশী হয়।

ডিস্ক প্রলেপস কাদের বেশী হয় ?
এটি মহিলা ও পুরুষ উভয়েরই হয়। তবে পুরুষের তুলনায় মহিলারা এই রোগে বেশি ভুগে থাকেন।

ডিস্ক প্রলেপস এর লক্ষন কি ?

ঘাড় বা সারভাইক্যাল স্পাইন :

–  ঘাড়ে ব্যাথা
–  ব্যথা ঘাড় থেকে হাতের দিকে ছড়ায় ও হাতে তীব্র ব্যাথা হয়।
–  হাত ঝুলিয়ে রাখলে ও  বিছানায় শুলে বেশী  ব্যাথা করে
–  হাত ঝিনঝিন করে বা অবশ অবশ মনে হয়
–  হাতের শক্তি কমে যায় বা হাত দুর্বল হয়ে আসে
–  অনেকক্ষেত্রে হাতের মাংসপেশী শুকিয়ে আসে ইত্যাদি।

কোমর বা লাম্বার স্পাইন :

–  কোমরে ব্যাথা
–  ব্যাথা কোমর থেকে পায়ের দিকে ছড়ায়
–  পা ঝিন ঝিন বার অবশ অবশ মন হয়
–  খানিক ক্ষণ দাড়িয়ে থাকলে কিংবা হাটলে আর হাঁটর ক্ষমতা থাকে না কিন্তু কিছুক্ষন
বিশ্রাম নিলে আবার কিছুক্ষন হাটতে পারে
–  পা ভারী বা অধিক ওজন মনে হয়
–  পায়ে জ্বালাপোড়া অনুভব করে
–  পায়ের শক্তি কমে যায় ও অনেক ক্ষেত্রে পায়ে মাংসপেশী শুকিয়ে যায়
–  অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যাক্তির প্রসাব ও পায়খানায় কন্ট্রোল থাকে না।

ডিস্ক  প্রলেপস নির্ণয় করবেন কিভাবে ?
একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ক্লিনিক্যালি পরীক্ষার পাশাপাশি আক্রান্ত স্পাইনের এম আর আই বা ম্যাগনেটিক রিজোনেনস ইমেজিং পরীক্ষার মাধ্যমে কোন লেভেলে কতটুকু ডিস্ক প্রলেপস তা সঠিকভাবে নির্ণয় করে থাকেন।

চিকিৎসা :
এর চিকিৎসা হল ঔষধের পাশাপাশি সম্পূর্ণ বিশ্রাম অর্থাৎ হাটাচলা বা মুভমেন্ট করা যাবে না, এমন অবস্থায় থেকে সঠিক ফিজিওথেরাপি, এক্ষেত্রে  রোগীর অবস্থা অনুযায়ী  ২-৪ সপ্তাহ ফিজিওথেরাপি হাসপাতালে ভর্তি থেকে দিনে ২-৩ বার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিলে ও চিকিৎসক নির্দেশিত থেরাপিউটিক ব্যায়াম করলে রোগী দ্রুত আরগ্য লাভ করে। এবং সুস্থ হওয়ার পর কিছু সতর্কতা  অবলম্বন করতে হবে। যেমন –

১। সামনের দিকে ঝুকে ভারী কাজ করবেন না

২। শোবার সময় ১টা মধ্যম সাইজের বালিশ ব্যাবহার করবেন

৩। ভারি ওজন তোলা নিষেধ

৪। শক্ত বিছানায় শোবেন

৫।  ভ্রমন ও হাটাচলার সময় সারভাইক্যাল কলার অথবা লাম্বার করসেট ব্যাবহার
করবেন

৬। চিকিৎসকের নির্দেশীত ব্যায়াম করবেন।

লেখক : বাত, ব্যাথা, পারালাইসিস ও ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, চেয়ারম্যান ও চীফ কনসালটেন্ট , ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা ।