নিউজ ডেস্ক:
জুমার নামাজ যেন কোনোভাবেই কাজা না হয়, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। নিজের কাজকর্ম ও দিনের রুটিন এমনভাবে সাজাতে হবে যেন নামাজ কাজা না হয়। জুমার নামাজ কাজা হওয়ার আশঙ্কা থেকেই অনেক আলেম জুমার দিন সফর করাকে মাকরূহ বলেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং রাসুলের আনুগত্য করো, আর তোমরা তোমাদের আমল বিনষ্ট করো না।’
(সূরা মুহাম্মাদ : ৩৩)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ জুমার নামাজ আদায় করবে অথবা আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর লাগিয়ে দেবেন, ফলে তারা নিশ্চিত গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (মুসলিম, ৩য় খ-, অধ্যায় : জুমুয়া, অনুচ্ছেদ : জুমুয়া ছেড়ে দেয়ায় হুশিয়ারি, পৃ. ১০, হাদিস নং ২০৩৯)। তারপরও সংগত কারণে জুমার নামাজ পড়তে না পারলে তার পরিবর্তে জোহর নামাজ আদায় করতে হবে। কারণ নির্ধারিত সময়, শর্তাবলি ও জামাত ছাড়া একাকি জুমার নামাজ হয় না।
ইমামের সঙ্গে পুরো নামাজ না পেলে
জুমার খুতবা দুই রাকাত নামাজের স্থলাভিষিক্ত। (ইবনে আবি শায়বা, আল-মুসান্নাফ, ৫ম খ-, পৃ. ১০৯- ১১০, হাদিস নং ৫৩৬৭, ৫৩৭৪)। কাজেই খুতবার আগেই মসজিদে আসতে হবে। তবে প্রকৃত কারণে দেরি হলে এবং ইমাম নামাজ শুরু করে দিলে ইমামের সঙ্গে নামাজে যোগ দিতে হবে। এক রাকাত না পেলে ইমামের সালাম ফেরানোর পর উঠে দাঁড়িয়ে ছুটে যাওয়া সে এক রাকাত পড়ে নিতে হবে। আর দুই রাকাতই না পেলে অর্থাৎ দ্বিতীয় রাকাতের রুকুর পর থেকে শেষ বৈঠক পর্যন্ত ইমামের সঙ্গে যোগ দিলে ইমামের সালাম ফেরানোর পর উঠে দাঁড়িয়ে দুই রাকাত পড়ে নিতে হবে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, যখন তোমরা একামত শোনো তখন শান্ত ও ধীরভাবে নামাজে যাও। তাড়াহুড়ো করো না। ইমামের সঙ্গে যতটুকু (নামাজ) পাও আদায় করো আর যা ছাড়া পড়েছে তা (ইমামের সালামের পর) পুরো করে নাও। (বোখারি, ১ম খ-, অধ্যায় : আজান, অনুচ্ছেদ : নামাজে স্থিরতার সঙ্গে যাওয়া, পৃ. ২২৮, হাদিস নং ৬১০)।
অবশ্য অন্য একটি হাদিসের আলোকে অনেকে মনে করেন যে, জুমার নামাজ দুই রাকাতই না পেলে অর্থাৎ আত্তাহিয়াতু পড়া অবস্থায় ইমামের সঙ্গে যোগ দিলে চার রাকাত জোহর পড়ে নিতে হবে। তারা যে হাদিসের আলোকে এমন মনে করেন তা হলো হজরত সালেম তার বাবা থেকে তিনি নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, নবী (সা.) বলেন, যে জুমা বা অন্য নামাজের এক রাকাত পেল সে নামাজ পুরো করল। (সুনানু আন-নাসাঈ, ১ম খ-, অধ্যায় : নামাজের সময়, অনুচ্ছেদ : নামাজ এক রাকাত পাওয়া, পৃ. ৪৮১, হাদিস নং ১৫৪০)।
অর্থাৎ এক রাকাত পেলে নামাজ পুরো হলো, তাই আর এক রাকাত পড়ে নিলে হবে। পক্ষান্তরে দুই রাকাত না পেলে নামাজ পুরো হলো না, তাই চার রাকাত জোহর পড়ে নিতে হবে। কিন্তু হাদিসের এই ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, প্রথমত. এই হাদিসে তো ইমামের সঙ্গে এক রাকাত পেলে জুমা বা অন্য নামাজ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। দুই রাকাত না পাওয়ার প্রসঙ্গ আলোচনাই হয়নি। কাজেই হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত উপরোক্ত হাদিস অর্থাৎ ‘যখন তোমরা একামত শোনো তখন শান্ত ও ধীরভাবে নামাজে যাও। তাড়াহুড়ো করো না। ইমামের সঙ্গে যতটুকু (নামাজ) পাও আদায় করো আর যা ছাড়া পড়েছে তা (ইমামের সালামের পর) পুরো করে নাও।’
এর আলোকে দুই রাকাত না পেলে অর্থাৎ দ্বিতীয় রাকাতের রুকুর পর থেকে শেষ বৈঠক পর্যন্ত ইমামের সঙ্গে যোগ দিলে ইমামের সালাম ফেরানোর পর উঠে দাঁড়িয়ে দুই রাকাত পড়ে নিতে হবে। এটিই যথার্থ ও যৌক্তিক। দ্বিতীয়ত. নামাজের এক রাকাত পেলে নামাজ পুরো করার অর্থ হলো নামাজের এক রাকাত পেলেও নামাজের পুরো সওয়াব পাওয়া যাবে। আর দুই রাকাত নামাজের দুই রাকাতই না পেলে তার সওয়াব দুুই রাকাত বা এক রাকাত পাওয়ার সমান হবে না।
ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা, সহকারী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ