আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। হোয়াইট হাউজে কে উঠবেন তা নিয়ে চলছে জল্পনা। নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি দ্বিতীয়বারের মতো জয়ী হন তাহলে ট্রাম্প প্রশাসন গর্ভপাতের অধিকার সীমিত করতে কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
যুক্তরাষ্ট্রে ঊনবিংশ শতাব্দীতে কমস্টক অ্যাক্ট নামে একটি আইন চালু করা হয়েছিল। এ আইনের আওতায় ‘গর্ভপাতে ব্যবহৃত’ সরঞ্জামসহ বিভিন্ন উপকরণ ডাকযোগে আদান-প্রদান নিষিদ্ধ করা হয়।
সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার শাসনকালে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়ভাবে গর্ভপাতের অধিকারের সুরক্ষা দিয়ে কয়েক দশক ধরে যে আইন চালু ছিল, ট্রাম্পের পছন্দের বিচারপতি নিয়োগের মধ্য দিয়ে সেটি মুখ থুবড়ে পড়ে।
অবশ্য ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প এ ক্ষেত্রে নমনীয় হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। নিজের টেবিলে স্বাক্ষরের জন্য গর্ভপাতবিরোধী কোনো বিল পেলে সেটির বিরোধিতা করবেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প।
হেরিটেজ ফাউন্ডেশন প্রকাশিত কিছু নথিতে দেখা গেছে, কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। যদিও ট্রাম্প প্রকাশ্যে এ নথি থেকে নিজের দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন।
ট্রাম্প গর্ভপাতের বড়ির বিরুদ্ধেই প্রথম পদক্ষেপটি নিতে পারেন বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। কাইজার ফ্যামিলি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুসারে, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে যত গর্ভপাতের ঘটনা ঘটেছে, তার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ওষুধ সেবনের মাধ্যমে।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) ২০০০ সাল থেকে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে গর্ভপাতের অনুমোদন দিয়েছে। এর জন্য সাধারণত যিনি গর্ভপাত করাতে চাইতেন, তাকে সশরীর হাসপাতালে যেতে হত। তবে করোনা মহামারি চলাকালে টেলিহেলথ সেবা চালু হয়। তখন সাময়িকভাবে অনলাইনে সেবা নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সরকার এ ব্যবস্থাকে স্থায়ী রূপ দেয়।
জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক সোনিয়া সুটারের মনে করেন, ট্রাম্প জয়ী হলে সশরীর হাজির হওয়ার বাধ্যবাধকতা আবার চালু হতে পারে। নিয়মকানুনে যেসব শিথিলতা আনা হয়েছে, সেগুলোও বাদ দেওয়া হতে পারে।
গর্ভপাতের অধিকার বিষয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান প্ল্যান সি-এর বিশ্লেষক অ্যাঞ্জি জ্যঁ ম্যারি, কমলা জিতলে চিকিৎসাপত্র ছাড়াই বড়িগুলো সহজলভ্য করতে গর্ভপাতের পক্ষে সোচ্চার থাকা মানুষেরা চাপ দিতে পারেন।
যেসব নারী গর্ভপাত করাতে চান, তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করার সুযোগ রেখেছিলেন বাইডেন। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ট্রাম্প প্রশাসন তা বাতিল করে দিতে পারে। এতে ওই নারীদের বিচারের মুখোমুখি করার পথ তৈরি হবে।
অবশ্য গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার থাকা সংগঠনগুলো প্রচার চালাচ্ছে। ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে যেই জিতুক, নারীদের জন্য জরুরি উপকরণগুলো যেন হাতের নাগালে থাকে তা নিশ্চিত করতেই প্রচারণা চালাচ্ছে তারা।