প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, ‘দেশীয় ফল এই মেলায় রাখা হয়েছে। আমাদের ছোট সোনামণিদের অনেকেই ঢেওয়া, করমচা, চালতা ফল দেখিনি। স্কুলের শিক্ষার্থীদের দেখার সুযোগ করে দেওয়া জন্য প্রেসক্লাবের সভাপতি মহোদয় বলেছেন, আমার সেটির প্রস্তাব করেছি। তরুণ এবং শিশুদের দেখার যে সুযোগ কৃষি দপ্তর করে দিয়েছে, সে জন্য তাদের ধন্যবাদ।’ তিনি আরও বলেন, বাজারের অসংখ্য বিদেশী ফলের ভিড়ে আমাদের দেশী ফল যেন হারিয়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দেশীয় ফল কোনো অংশে কম নয়। এটি চমৎকার উদ্যোগ। আপনারা আপনাদের সন্তানদের নিয়ে ফল মেলা দেখতে আসবেন, দেশীয় ফলকে প্রমোট করবেন।
জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা আরও বলেন, মানবদেহের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের সহজলভ্য ও প্রাকৃতিক উৎস হলো ফল। আমাদের মাটি ও জলবায়ু বিভিন্ন রকমের ফল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। কৃষিবান্ধব সরকারের যুগোপযোগী নীতি ও বাস্তবমুখী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশ দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। তাই এই ফল মেলার বিকল্প নাই। শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদনেও এসেছে ব্যাপক সাফল্য। নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের নিশ্চয়তার জন্য কাজ করে যাচ্ছে এই বিভিন্ন ধরনের ফলে। খাদ্য গ্রহণের প্রধান উদ্দেশ্য হলো সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম হয়ে বেঁচে থাকতে হলে ফল খেতে হবে। এজন্য একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণ ফল খাওয়া প্রয়োজন। বেশি করে ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং অঞ্চল উপযোগী স্বল্পমেয়াদি, অধিক ফলনশীল ও লাগসই দেশীয় ফলের জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে ফল চাষের আরো সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে। ফল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ফলের বাগান গড়ে তোলার সাথে সাথে গ্রামাঞ্চলে, বসতবাড়ির আঙিনায়, রাস্তার ধারে, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় এবং শহরাঞ্চলের ছাদে ফলদ বৃক্ষরোপণ করা যেতে পারে। নতুন প্রজন্মকে ফল সম্পর্কে ধারণা প্রদানসহ তাদের ফলদ বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করবে। একই সাথে বৃক্ষরোপণের আহ্বান জানাচ্ছি।’
ফল মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজিব হাসান কচি। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মোমরেজ আলী, অতিরিক্ত উপ পরিচালক কায়সার ইকবাল, কৃষি প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন পাহলোয়ানসহ উপজেলা কৃষি অফিসারগণ উপস্থিত ছিলেন।
মেলা প্রাঙ্গন সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সামান্য জায়গায় স্বল্প পরিসরে জেলা পর্যায়ের আয়োজন সমালোচিত হয়েছে ব্যাপকভাবে। চুয়াডাঙ্গার জেলার চার উপজেলার মধ্যে তিনটি উপজেলা কৃষি দপ্তর এ মেলায় অংশগ্রহণ করলেও আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি দপ্তরকে এ মেলায় দেখা যায়নি। মেলায় সদর উপজেলা, দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলা কৃষি অফিস এবং জেলা হর্টিকালচার সেন্টার অংশ নিয়েছে। জেলা হর্টিকালচার সেন্টারের কোনো ফল নেই। তাঁদের শুধু বৃক্ষ। এছাড়াও, মেলায় অংশ নেয়া বাকি তিনটি স্টলে ফলের কমবেশি উপস্থিতি থাকলেও বিক্রিত নয় বেশিরভাগ ফল। মেলায় শুধু দেখায় যাবে বেশিরভাগ দেশী ফল। কেনার কোনো সুযোগ নেই।
তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, দেশী ফলের প্রচার তুলে ধরতে এ মেলা আয়োজন। যারা এখানে অংশ নিয়েছেন তাদের ঠিকানাসহ দেয়া হবে। এবং এখান থেকে ফল কিনতেও পারবেন। ফলের চারা কোথায় পাওয়া যায়, এবং পরিচর্যাসহ সবকিছুই জানার সুযোগ এই মেলাতে থাকবে। উল্লেখ্য, মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে কৃষকদের মধ্যে ফলজ বৃক্ষের চারা বিতরণ ও খামার বাড়ি প্রাঙ্গনে জেলা প্রশাসক একটি ফলজ বৃক্ষ রোপণ করেন।