নিউজ ডেস্ক:
একদিকে চলছে ব্রেন টিউমার অপারেশন, আর অন্যদিকে রোগী খেলছেন মোবাইল গেম্স! বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হলেও ভারতের চেন্নাইয়ে এমনটাই ঘটেছে।
গত বুধবার দশ বছরের নন্দিনীর মস্তিষ্কে সফল অস্ত্রোপচার করেন চেন্নাইয়ের চিকিত্সকরা।
ডাক্তাররা যখন অপারেশনে ব্যস্ত, নন্দিনী তখন মগ্ন ছিল মোবাইল গেম্সে।
রোগীকে অজ্ঞান না করে ব্রেন টিউমার অপারেশন ঝুঁকিবহুল হলেও বিরল নয়। তবে সেই রোগী যদি হয় ছটফটে কিশোরী, চিকিত্সকদের চ্যালেঞ্জ অনেকাংশেই কঠিন হয়ে পড়ে। সম্প্রতি চেন্নাইয়ের এক হাসপাতালে সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখালেন শল্যচিকিত্সকরা। শুধু তাই নয়, জটিল অস্ত্রোপচারের সময় নন্দিনী ক্রমাগত হাত-পা নেড়ে আর অনর্গল কথা বলে তাঁদের মনোবল জুগিয়েছে বলে দাবি করেছেন চিকিৎসকরা।
চেন্নাইয়ের বাসিন্দা, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী নন্দিনী ভারতনাট্যম শিল্পী হিসেবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। কিন্তু আচমকা শরীরে খিঁচুনি ধরায় তাকে শহরের এসআইএমএস হাসপাতালে নিয়ে আসেন বাবা-মা। স্ক্যান করে দেখা যায়, মেয়েটির মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশে টিউমার দেখা দিয়েছে। মগজের ওই অংশ শরীরের বাঁ-দিকের অঙ্গ সঞ্চালন করে।
টিউমার আকারে বাড়তে থাকলে ভবিষ্যতে তার পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সেই কারণে অবিলম্বে শল্যচিকিত্সা করে তা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন চিকিত্সকরা। ঠিক হয়, রোগীকে অচৈতন্য করে ক্রেনিওটমি পদ্ধতিতে তার খুলি থেকে একটি হাড় সরিয়ে মস্তিষ্কের আক্রান্ত অংশে পৌঁছনো হবে। তবে চিকিত্সকরা সিদ্ধান্ত নেন, এক্ষেত্রে রোগীকে অজ্ঞান না করেই অপারেশন করা হবে।
হাসপাতালের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ সার্জেন রূপেশ কুমার জানান, ‘মস্তিষ্কের অত্যন্ত সংবেদনশীল অংশে থাকার জন্য অচৈতন্য না করেই নন্দিনীর চিউমার সরানোর পরিকল্পনা করি। অজ্ঞান করে অপারেশনে কোনও ভুল হলে ও পক্ষাঘাতের শিকার হতে পারত। ‘ অন্যদিকে, রোগী জেগে থাকলে, তার মস্তিষ্কের প্রতিটি নড়াচড়া চিকিত্সকরা চাক্ষুশ করতে পারবেন বলে মনে করেন। এসআইএমএস হাসপাতালের কর্মকর্তা চিকিত্সক সুরেশ বাপু জানিয়েছেন, মস্তিষ্কের নিউরনগুলিতে ব্যথার লরিসেপ্টর নেই বলে অপারেশনের সময় রোগী কোনো যন্ত্রণা অনুভব করে না। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ওয়ার্ল্ড নিউরোসার্জারি জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এই বিষয়ে বিশদে আলোচনা করা হয়েছে বলে প্রভু জানান।
জানা গেছে, সাড়ে তিন ঘণ্টার দীর্ঘ অস্ত্রোপচারের পুরো সময়টাই মোবাইল ফোনে মগ্ন হয়ে গেম্স খেলেছে নন্দিনী। তার সামনে অবশ্য সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন নিউরো অ্যানেস্থেসিস্ট সুধাকর সুব্রহ্মণিয়ম। অপারেশনের ঠিক দুই দিন পরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে নন্দিনী। কিছু দিনের মধ্যেই ফের নাচের ক্লাসে যাবে বলে সে জানিয়েছে।
সূত্র: এই সময়