বিনোদন ডেস্ক:
তাঁদের সম্পর্কের কথা অনেক আগেই জানাজানি হয়েছিল। এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে মোনালী ঠাকুর দুজনের একটি ছবি শেয়ার করে লিখেছিলেন, এই লোকটা তাঁর এ বছরের, আগামী বছরের, তার পরের বছরের—এ রকম আরও অনেক বছরের ভ্যালেন্টাইন। অর্থাৎ প্রেমিকের ছবি শেয়ার করে জানিয়ে দিলেন, হৃদয় আবার নতুন প্রেমে মজেছে। এবার তিনি জানালেন, শুধু মন দেওয়া–নেওয়া না, রীতিমতো বিয়ে করে সংসার করছেন তাঁরা। তাও ঘটনাটা ঘটিয়েছেন বছর তিনেক আগে।
মাইকের সঙ্গে ২০১৬ সালে। ইনস্টাগ্রাম থেকে পরিচয়, জানাশোনা এবং যোগাযোগ। ছবি: ইনস্টাগ্রামঅনেক তরুণের ‘ক্রাশ’ মোনালী ঠাকুর বিয়েটা সেরে ফেলেছিলেন ২০১৭ সালে। তবে শুভ কাজটা গোপনেই সেরেছেন এই গায়িকা ও অভিনেত্রী। দিনের পর দিন সংসার করলেও ঘুণাক্ষরেও টের পেতে দেননি তাঁর অনুরাগীদের (ভক্তদের)। অবশেষে নিজেই জানালেন, তিনি এখন বিবাহিত। করছেন সংসার। ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোনালী ঠাকুর বললেন, তিন বছর আগেই জার্মান বয়ফ্রেন্ড মাইককে বিয়ে করেছেন তিনি।
সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে মোনালী ঠাকুরের একটি মিউজিক ভিডিও। সেই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়েই নিজের বিয়ের কথা জানান গায়িকা। বলেন, ২০১৭ সালেই তিনি মাইককে বিয়ে করেছেন। কিন্তু কাউকে কিছু বলেননি। পরিবারের সদস্য আর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বন্ধুর উপস্থিতিতেই শুভ কাজ সম্পন্ন হয়। ইচ্ছা থাকলেও ঢাকঢোল পিটিয়ে অনুষ্ঠান হয়নি। না হওয়ার কারণ আছে। সেদিন, অর্থাৎ বিয়ের দিন বিমানবন্দরে আটকে ছিলেন মাইক। ভেবেছিলেন ভিসা অন অ্যারাইভ্যাল পেয়ে যাবেন। কিন্তু তা হয়নি। তবে সে দেশের (ভারত) সরকার তখন তাঁদের খুব সাহায্য করে বলে জানান মোনালী। কার্যত, সরকারের হস্তক্ষেপেই বিয়ে ঠিকমতো হওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু প্রথমে বিমানবন্দরে জটিলতা, সময় নষ্ট হওয়ার কারণে বড় পরিসরে আয়োজন করা হয়নি।
মাইকের সঙ্গে ২০১৬ সাল থেকে পরিচয়, জানাশোনা এবং যোগাযোগ। সে বছর ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাসে মোনালীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন মাইক। এ নিয়েও দারুণ স্মৃতি আছে মোনালীর।
সাক্ষাৎকারে মোনালী জানিয়েছেন, প্রস্তাবটা ছিল দারুণ। যে গাছের নিচে তাঁদের আলাপ-পরিচয়, সেখানেই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন মাইক। তখন সুইজারল্যান্ডের তাপমাত্রা ছিল মাইনাস তিন থেকে চার ডিগ্রি। অত শীতে বাইরে থেকে সময় কাটানোর ইচ্ছা ছিল না। তাই বেশি কথা বলে বা ন্যাকামি করে সময় নষ্ট করেননি তিনি। প্রস্তাব স্বীকার করেন। তারপর বাজে বিয়ের সংগীত। বর্তমানে স্বামীর সঙ্গে সুইজারল্যান্ডেই রয়েছেন মোনালী।
জানা গেছে, মোনালীর নতুন সিঙ্গল ‘দিল কা ফিতুর’-এ একসঙ্গে কাজ করছেন বর মাইকও। গায়িকা জানিয়েছেন, শুরুতে অন্য এক (জার্মান) মডেলের সঙ্গে শুটিংয়ের কথা স্থির হয়। কিন্তু তাঁর মিউজিক ভিডিওর নির্মাতার মনে হয়, তাতে নাকি সেই রোমান্টিক দৃশ্যগুলো ঠিকঠাক আসবে না। তাই সেই মডেলের বাদ দিয়ে মাইককে আনা হয়।
মোনালী ঠাকুর। ছবি: ইনস্টাগ্রামপ্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে কলকাতার থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে বিয়ের বিষয়ে প্রশ্ন করায় মোনালী বলেছিলেন, বিয়ে নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করার কী আছে? এটা তো জাস্ট একটা সইয়ের ব্যাপার। বিয়ে হয়নি। হলে জানতে পারবেন…। সেদিন মিথ্যে বলেছিলেন, তা প্রমাণিত হলো এই করোনাকালে।
নানা গুণের অধিকারী মোনালী ঠাকুর ১৯৮৫ সালের ৩ নভেম্বর ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গায়িকা মোনালীর সুরেলা কণ্ঠের সঙ্গে সবাই পরিচিত, কিন্তু এর বাইরে তিনি একজন দক্ষ নৃত্যশিল্পী। একাধারে ‘ভরতনাট্যম’, ‘হিপহপ’ ও ‘সালসা’ নৃত্যে অসামান্য পারদর্শিতা রয়েছে তাঁর।
মোনালীদের সংগীত পরিবার। বাবা শক্তি ঠাকুর ও বোন মেহুলী ঠাকুর দুজনেই সংগীতশিল্পী। পণ্ডিত জগদীশ প্রসাদ ও পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কাছে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নিয়েছেন মোনালী।
শুধু গানে–নৃত্যে নয়, অভিনয়েও মোনালীর দখল আছে। অভিনয়জীবন শুরু হয় বাংলা টেলি ধারাবাহিক ‘আলোকিত এক ইন্দু’-তে ‘ইন্দুবালা’ চরিত্রে। বড় পর্দায় প্রথম অভিনয় করেন রাজা সেন পরিচালিত ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ ছবিতে।
সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে মোনালী ঠাকুরের একটি মিউজিক ভিডিও। ছবি: ইনস্টাগ্রাম২০১৪ সালে নাগেশ কুক্কুনুরের ‘লক্ষ্মী’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন মোনালী। ‘রেস’ ছবিতে ‘জারা জারা টাচ মি’ গানের পরই মোনালীর ক্যারিয়ারের সাফল্যের সূচনা। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। রেডিওতে এই গান ‘মোস্ট প্লেড সং’-এর তকমা পায়। বেস্ট ফিমেল সিঙ্গারের জন্য আইফা ও অপ্সরা অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন।
এরপর ২০১৫ সালে ‘দম লাগা কে হাইসা’ ছবির ‘মোহ মোহ কে ধাগে’ গানের জন্য জাতীয় পুরস্কার পান মোনালী ঠাকুর। এ ছাড়া ‘লুটেরা’ ছবির ‘সাওয়ার লু’-র জন্য পেয়েছেন সেরা গায়িকার সম্মান। গায়িকা মোনালীর অভিনয়ের প্রতি এত ঝোঁক যে মাঝেমধ্যে অনেক সুপারহিট ছবিতে একেবারে ছোট চরিত্রেও অল্প সময়ের জন্য দেখা গেছে তাঁকে।