নিউজ ডেস্ক:
রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী থেকে সপরিবারে রিহ্যাব আবাসন মেলায় এসেছেন ওবায়দুর রহমান। তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন স্টলে ফ্ল্যাটের দাম ও সুযোগ-সুবিধার তথ্য সংগ্রহ করছিলেন তিনি। মিরপুরেই ১ হাজার ২০০ বর্গফুট আয়তনের মধ্যে একটি ফ্ল্যাট কেনার ইচ্ছার কথা জানিয়ে প্রথম আলোকে ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘ভিড় এড়াতে একটু আগেভাগেই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মেলায় এসেছি। যে ধরনের ফ্ল্যাট খুঁজছি, তেমন কয়েকটির সন্ধান পেয়েছি। এখন সবদিক ভেবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’
ফ্ল্যাট অথবা প্লট কিনতে আগ্রহী এমন অনেক ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় চোখে পড়ে শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের রিয়েল এস্টেট হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) শীতকালীন আবাসন মেলায়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় গতকাল শনিবার মেলা প্রাঙ্গণ ছিল জমজমাট।
আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের মেলার ক্রেতাসমাগম নিয়ে তারা বেশ খুশি। গতকাল সকাল থেকেই মেলায় দর্শনার্থীদের লক্ষণীয় ভিড় ছিল। দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে এ ভিড় আরও বেড়ে যায়।
কনকর্ড রিয়েল এস্টেট: ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, ধানমন্ডি, খিলক্ষেত এলাকায় বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের বিস্তারিত নিয়ে মেলায় এসেছে কনকর্ড। ১ হাজার ২০০ বর্গফুট থেকে সাড়ে ৩ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে কনকর্ডের এসব প্রকল্পে। তবে ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট বেশি পাওয়া যাচ্ছে খিলক্ষেতের কনকর্ড লেকসিটিতে।
লেকসিটি কনকর্ডে দুই ধরনের দামে ফ্ল্যাট বিক্রি করা হচ্ছে। আগেই তৈরি হওয়া ফ্ল্যাটগুলো প্রতি বর্গফুট সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর নতুন তৈরি হওয়া ফ্ল্যাটের দাম রাখা হচ্ছে প্রতি বর্গফুট সাড়ে ৬ হাজার টাকা। উত্তরাতে কনকর্ডের মাঝারি আকারের ফ্ল্যাটগুলোর দাম রাখা হচ্ছে প্রতি বর্গফুট ৮ থেকে ৯ হাজার টাকায়। গুলশান, বনানী, বারিধারা ও ধানমন্ডিতে কনকর্ডের বড় আকারের ফ্ল্যাটের দাম বেশি। এসব এলাকায় বর্গফুটপ্রতি ১৬ হাজার ৫০০ থেকে ২৮ হাজার টাকায় ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির বিপণন ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, কনকর্ড মানের ব্যাপারে কখনো আপস করে না। আর কনকর্ডের প্রকল্পগুলোর অবস্থান বিবেচনায় নেওয়া হলে ফ্ল্যাটের দাম সে তুলনায় খুব বেশি না।
আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ: গ্রিন মডেল টাউন আবাসিক প্রকল্পের পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে মাঝারি আকারের ফ্ল্যাটের প্রকল্প আছে মিরপুর, শান্তিনগর, মগবাজার, পল্টন এলাকায়। আর আমিন মোহাম্মদের বড় আকারের ফ্ল্যাট নিতে হলে ক্রেতাদের যেতে হবে গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়।
আমিন মোহাম্মদ ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্টের সহকারী পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ ওয়াসিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা দামের ফ্ল্যাটের বিষয়ে ক্রেতাদের ভালো সাড়া পাচ্ছি। এবারের মেলা থেকে বোঝা যাচ্ছে আমিন মোহাম্মদের মতো প্রতিষ্ঠিত ডেভেলপার কোম্পানির ফ্ল্যাটের চাহিদা আরও বেড়েছে। তবে জমির নিবন্ধন খরচ ও ব্যাংক সুদ আরও কমিয়ে আনতে পারলে ফ্ল্যাটের বিক্রি আরও ভালো হতো।’
অ্যাডভান্সড ডেভেলপমেন্ট টেকনোলজিস: মূলত তিনটি প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য নিয়ে মেলায় এসেছে অ্যাডভান্সড টেকনোলজিস। মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন ফ্ল্যাটের দামে অর্থছাড় দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। সাভারের হেমায়েতপুরে অ্যাডভান্সড অ্যানজেল সিটি নামের একটি স্যাটেলাইট টাউন প্রকল্পে ১ হাজার থেকে ২ হাজার ১০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। মেলার জন্য প্রকল্পটির প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাট বিশেষ ছাড় দিয়ে ৩ হাজার ৩৩৩ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ৮০ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত এ প্রকল্পে মোট ২৯টি ভবন নির্মাণ করছে অ্যাডভান্সড। এর মধ্যে ১০টি ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে, আর ১৯টির নির্মাণকাজ চলছে।
ঢাকার বারিধারা জে ব্লকে সাড় তিন বিঘা জায়গার একটি প্রকল্পে ১ হাজার ২০০ বর্গফুট থেকে ১ হাজার ৬৭০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট বিক্রি করছে অ্যাডভান্সড। এমনিতে এই প্রকল্পের ফ্ল্যাটের দাম বর্গফুটপ্রতি ৭ হাজার টাকায় বিক্রি করা হলেও মেলা উপলক্ষে ৬ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া পোস্তগোলা এলাকায় অ্যাডভান্সড ব্রিজ পয়েন্ট নামের একটি কনডোমিনিয়াম বা আবাসিক ও বিপণিবিতান প্রকল্পের তথ্যও ক্রেতাদের জানানো হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির বিপণন বিভাগের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী মামুন মিয়া বলেন, মেলায় এবার প্রকৃত ক্রেতারা বেশি আসছেন। আগের চেয়ে তাই এবারের মেলায় ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
প্রাইম অ্যাসেট: রাজধানীর পূর্বাচলে বিভিন্ন আকারের জমি বিক্রির তথ্য নিয়ে মেলায় অংশ নিচ্ছে প্রাইম অ্যাসেট গ্রুপ। পূর্বাচল প্রাইম সিটি নামের প্রকল্পের মাধ্যমে ৩ থেকে ১০ কাঠা আকারের তৈরি প্লট বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। মেলা উপলক্ষে তাৎক্ষণিক মূল্য পরিশোধে প্লটের মূল্যে ৪০ শতাংশ নগদ অর্থছাড় দেওয়ার কথা জানালেন প্রাইম অ্যাসেট গ্রুপের ব্যবসায় উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মো. আশরাফুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পটি সরাসরি দেখার জন্য মেলা থেকে গাড়িতে করে ক্রেতাদের পাঠানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দুপুর পর্যন্ত পাঁচজন ক্রেতাকে প্রকল্প পরিদর্শনের পাঠানোর তথ্যও জানা গেল।