ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার কুমার নদে ১২৪ বছরের ধারাবাহিকতায় নৌকাবাইচ হয়েছে। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই বাইচকে ঘিরে এলাকায় তিন দিনব্যাপী গ্রামীণ মেলা শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার তেলজুড়ী এলাকায় কুমার নদে বাইচ হয়। এতে ছোট-বড় ১০-১২ টি নৌকা অংশ নেয়।
গতকাল বাইচ দেখতে জেলা ও আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার হাজারো মানুষের ঢল নামে নদের দুই পাড়ে। এ উৎসব দেখাতে সারা বছর অপেক্ষায় থাকে ওই এলাকাসহ আশপাশের অনেক গ্রামের লোকজন। একে কেন্দ্র করে ওই অ লের মেয়েদের স্বামীরা শ্বশুরবাড়ি আসেন। আত্মীয়-স্বজন, পরিবার-পরিজন নিয়ে মেতে ওঠেন আনন্দে গ্রামবাসী। বাইচে প্রথম ও দ্বিতীয় বিজয়ীদের একটি করে ফ্রিজ, তৃতীয় স্থান অধিকারীকে একটি রঙিন টিভি এবং সব অংশ গ্রহণকারীদের আকর্ষণীয় পুরস্কার দেওয়া হয় বলে আয়োজকেরা জানান।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুমার নদে হাজারো মানুষ নৌকা, ট্রলার নিয়ে নদীর দুই পাড়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করে বাইচ উৎসব। এছাড়া বাইচ কেন্দ্র করে মেলায় নানা রকম মিষ্টি ও বিভিন্ন খাবার, খেলনাসহ সৌখিন পণ্য ইলিশ মাছের পসরা সাজিয়ে বসে দোকানিরা।
নৌকা বাইচ ও মেলায় ঘুরতে আসা গৃহবধূ নিপা বেগম বলেন, ‘কুমার নদে নৌকা বাইচের দিনের জন্য সারা বছর অত্র অ লের মানুষ অপেক্ষায় থাকে। মেয়েরা জামাই নিয়ে বাবার বাড়িতে আসেন। প্রতিবারের মতো স্বামী-সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে নৌকা বাইচ দেখতে এসেছি। বাইচ দেখে মেলা ঘুরে অনেক কিছু কেনাকাটা করেছি।’
মেলায় আসা স্কুল শিক্ষার্থী আয়েশা সুলতানা বলেন, ‘বান্ধবীদের নিয়ে নৌকাবাইচ দেখেছি, মেলায় ঘুরেছি, অনেক কিছু কিনেছি। খাবার খেয়েছি, অনেক ভালো লেগেছে। খুব আনন্দ পেয়েছি।’
মিষ্টি ব্যবসায়ী আবুল খায়ের মোল্লা বলেন, ‘প্রায় প াশ বছর ধরে এই নৌকা বাইচের মেলায় মিষ্টি বিক্রি করছি। দোকানে রসগোল্লা, আমৃত্তি, দানাদার, জিলাপিসহ বিভিন্ন মিষ্টিসামগ্রী রয়েছে। বেচাকেনাও বেশ ভালো হচ্ছে।’
নৌকাবাইচ ও মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি শেখর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রইসুল ইসলাম পলাশ মিয়া বলেন, ‘চলতি বছর দিয়ে ১২৪তম নৌকাবাইচ হলো। শতবছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতিবছর এই আয়োজন করা হয়। জেলা-উপজেলা ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন জেলার মানুষ এই বাইচ দেখতে আসেন।’
জানতে চাইলে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম রসুল বলেন, ‘নৌকাবাইচ ও মেলা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বোয়ালমারী থানা-পুলিশের সদস্যদের নিয়োজিত রাখা হয়েছে।’