নিউজ ডেস্ক:
বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা নতুন চর উন্নয়নসহ ১৬ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ২২০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে পাওয়া যাবে ৪ হাজার ৭৪৪ কোটি ১২ লাখ টাকা। বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৪৬২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে পাওয়া যাবে ১৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এসব প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গোপসাগরের জেগে ওঠা নতুন চরে বনায়নের সময় অন্যান্য গাছের সঙ্গে নিম গাছ ও বিভিন্ন ফলের গাছ এবং বট গাছ লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে পাখিদের খাদ্যের যোগান সৃষ্টি হয়।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দেশেই প্রি-পেইড মিটার তৈরির নির্দেশ দেন। যাতে বিদেশ থেকে প্রি-পেইড মিটার আমদানি করতে না হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ভূমির ক্ষয় ও ভাঙ্গন, লবণাক্ততা বৃদ্ধির মতো পরিবেশগত বিপর্যয়ের ফলে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠী ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা নদী হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগরের দিকে যাত্রাপথে প্রচুর পরিমাণে পলি বহন করেÑ যা উপকূলের কাছাকাছি ক্রমান্বয়ে জমা হয়ে নদী ও বঙ্গোপসাগরের তলদেশের উচ্চতা বৃদ্ধির মাধ্যমে চরের সৃষ্টি করে। এই প্রক্রিয়ায় গত দুই দশকে দুই হাজার বর্গকিলোমিটারের অধিক ভূমি নতুন সৃষ্টি হয়েছে। এ সকল সৃষ্ট চরাঞ্চলের ভূমিকে স্থায়ী করার জন্য বনায়ন করা অতীব জরুরি।
তিনি আরো বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে চরাঞ্চলে জেগে ওঠা ভূমির স্থিতিকরণে ম্যানগ্রোভ বনায়ন অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। সে প্রেক্ষিতে বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় অঞ্চলে নতুন চর জেগে ওঠার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত এবং স্থায়ীকরণ, ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসের বিরুদ্ধে সবুজ বেষ্টনী তৈরি, কার্বন মজুদ বৃদ্ধি, আবাসস্থল এবং সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের জীববৈচিত্র্যতা বৃদ্ধিতে ‘বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা নতুন চরসহ উপকূলীয় এলাকায় বনায়ন’ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এবং কৃষি প্রধান দেশে নতুন জেগে ওঠা চরভূমির স্থায়ীকরণ ম্যানগ্রোভ বনায়ন কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১০৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা- যার পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থায়ন হবে।
একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে- শরীয়তপুর জেলার জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলায় পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯৭ কোটি ২১ লাখ টাকা। দ্য ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২০ কোটি ২২ লাখ টাকা। ময়মনসিংহ বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলায় ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৯ কোটি টাকা। মৃত্তিকা গবেষণা ও গবেষণা সুবিধা জোরদারকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। শেখ রাসেল এভিয়ারি ও ইকো-পার্ক স্থাপন, রাঙ্গুনিয়া, চট্রগ্রাম (২য় পর্যায়) প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিদ্যমান রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। চট্টগ্রামস্থ পারকি ও পতেঙ্গায় পর্যটন সুবিধাদি প্রবর্তন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২ কোটি ১১ লাখ টাকা। সালনা (রাজেন্দ্রপুর)- কাপাসিয়া- টোক-মঠখোলা মহাসড়ক (আর-৩১২) প্রশ্বস্তকরণ ও মজবুতিকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। মিরপুর ডিওএইচএস গেইট-২ থেকে মিরপুর-১২ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মহাসড়ক প্রশ্বস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা। পাগলা-জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ- আউশাকান্দি সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত বেইলি সেতুর স্থলে ৭টি সেতু এবং নিয়ামতপুর-তাহিরপুর সড়কের আবুয়া নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪১ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
এ ছাড়া পুলিশ বিভাগের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এনকম ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৬ কোটি ২ লাখ টাকা। বানৌজো শেরে-ই-বাংলা পটুয়াখালী স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম আর্টিলারি সেন্টার ও স্কলে মুজিব ব্যাটারী কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮০ কোটি টাকা। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. এলাকার জন্য স্মার্ট-প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। শেখ লুৎফর রহমান ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন গোপালগঞ্জ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১১২ কোটি ৮২ লাখ টাকা।