নিউজ ডেস্ক:
অনেকেরই উঁচুতে উঠলে নানা ধরনের সমস্যা হয়। কারও মাথা ঘোরে, তো কারও গা গোলাতে থাকে, সঙ্গে বমিও হয়। এমন অবস্থাকে চিকিৎসা পরিভাষায় “ভার্টিগো” বলা হয়ে থাকে। আসলে কানের অন্দরে ভেস্টিবুলার লেবিরিন্থ নামে একটি জায়গা রয়েছে, সেখানে কোনো অসুবিধা দেখা দিলেই এমন ধরনের সমস্যা হতে শুরু করে। এক্ষেত্রে অনেকেই অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা করিয়ে থাকেন। কিন্তু আপনার কি জানা আছে যে এই ধরনের রোগের প্রকোপ কমাতে বেশ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি দারুন কাজে আসে, যে সম্পর্কে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
যেসব কারণে এই রোগ হয়: ভার্টিগো বা ব্যালেন্স ডিজঅর্ডার নানা কারণে হতে পারে। যেমন-
১. ডায়াবেটিস
২. মাত্রতিরিক্ত মদ্যপান
৩. হাই কোলেস্টরল
৪. ধূমপান
৫. কানের ভিতরে সংক্রমণ
৬. অ্যানিমিয়া
৭. পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হওয়া
৮. ডিহাইড্রেশন
৯. থাইরয়েড রোগ
১০. রক্তনালীর রোগ
১১. মাথায় চোট
১২. মাইগ্রেন
১৩. শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি
১৪. ব্রেন টিউমার
১৫. মাল্টিপেল স্কেলেরোসিস
১৬. মোশান সিকনেস
লক্ষণ:
১. মনে হয় সব কিছুই যেন ঘুরছে। যেমনটা ভুমিকম্পের সময় মনে হয়ে থাকে।
২. ঠিক মতো হাঁটতে বা দাঁড়াতে সমস্যা হয়।
৩. মাথা ঘোরা।
৪. ক্লান্তি।
৫. সব কিছুই দুটো দুটো দেখা।
৬. খাবার গিলতে কষ্ট হওয়া।
৭. শুনতে কষ্ট হবে।
৮. দৃষ্টিশক্তি কমে যাবে।
৯.কানে যন্ত্রণা হতে পারে।
১০. মুখ নারাতে কষ্ট হবে।
এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক ভার্টিগোর প্রকোপ কমাতে সহায়তা করে এমন কিছু ঘরোয়া চিকিৎসাগুলি সম্পর্কে।
১. পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি:
দীর্ঘ দিন ঠিক মতো না ঘুমলে ভার্টিগোর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। তাই প্রথমেই যে কাজটা করতে হবে, তা হল রাতে কম করে ৮ ঘন্টা ঘুম চাইই চাই। এমনটা করলেই দেখবেন রোগ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
২. ধনে বীজ:
রাতে শুতে যাওয়ার আগে অল্প করে পানি নিয়ে তাতে ১ চামচ ধনে বীজ এবং ১ চামচ বৈঁচি গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। পরদিন সকালে জলটা ছেঁকে নিয়ে তাতে হাফ চামচ চিনি মিশিয়ে জলটা পান করুন। এমনটা কয়েকদিন করলেই দেখবেন ভার্টিগোর কষ্ট কমে যেতে শুরু করবে।
৩. কাজুবাদাম এবং তরমুজের বীজ:
ভার্টিগোর প্রকোপ কমাতে এই ঘরোয়া পদ্ধতিটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। কিন্তু প্রশ্ন হল, কীভাবে কাজে লাগাতে হবে এই দুটি উপাদানকে? পরিমাণ মতো পানি নিয়ে তাতে ৮ টা কাজুবাদাম, ৮ টা তরমুজের বীজ, ২ চামচ আটা এবং ১ চামচ পোস্তো মিশিয়ে সারা রাত রেখে দিন। সকালে উঠে সবকটি উপাদানকে মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। এবার একটা বাটিতে ১ চামচ ঘি নিয়ে অল্প আঁচে গরম করে নিন। ঘিটা যখন গরম হবে তখন তাতে ২ টো লবঙ্গ ফেলে ভেজে নিন। তারপর ঘি এবং ভাজা লবঙ্গের মধ্যে সকালে উঠে বানানো পেস্টটা যোগ করুন। অল্প সময় পরে অঁচটা বন্ধে করে সবে বানানো মিশ্রনটি দুধে গুলে খেয়ে ফেলুন। কয়েক সপ্তাহ এই মিশ্রনটি খেলেই উপকার মিলবে।
৪. লেবু:
এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে অল্প করে গোল মরিচ, এক চিমটে নুন এবং অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে নিন। ভাল করে জলটা নারিয়ে নিন, যাতে সবকটি উপাদান ঠিক মতো মিশে যেতে পারে। এই পানীয়টি ভার্টিগোর মতো শারীরিক অসুবিধাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে দারুন কাজে আসে।
৫. শরীরে পানির ঘাটতি যেন দেখা না দেয়:
ভার্টিগোকে দূরে রাখতে শরীরে জলের মাত্রা ঠিক রাখাটা জরুরি। আর এই কাজটি করবেন কীভাবে? খুব সহজ! প্রতিদিন কম করে ৩-৪ লিটার অথবা ১০ গ্লাস জল খেতেই হবে। প্রসঙ্গত, পানি খাওয়ার পাশাপাশি যদি ইচ্ছা হয় তাহলে মাঝে মধ্যে জুসও খেতে পারেন।
৬. স্ট্রবেরি:
পরিমাণ মতো দই নিয়ে তাতে অল্প করে স্ট্রবেরি মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন। এমনটা করলে খুব অল্প সময়েই ভার্টিগোর প্রকোপ কমে যাবে।
৭. আদা:
যখনই দেখবেন ভার্টিগোর করাণে মাথা ঘুরছে বা অন্য কোনও সমস্যা হচ্ছে, তখনই অল্প পরিমাণ আদা নিয়ে চিবিয়ে নেবেন অথবা আদা চা খাবেন। দেখবেন নিমেষে কষ্ট কমে যাবে।
৮. তুলসি পাতা:
এতে উপস্থিত বেশ কিছু প্রাকৃতিক উপাদান ভার্টিগোর লক্ষণ কমাতে দারুন কাজে আসে। তাই এবার থেকে এমন সমস্যা হলেই কয়েকটি তুলসি পাতা চিবিয়ে নেবেন অথবা তুলসি চা খাবেন। তাহলেই দেখবেন কষ্ট কমে যাবে।
৯. বাদাম দুধ:
এতে উপস্থিত কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন ই, ভিটামিন বি এবং ফাইবার এই ধরনের রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে এক মুঠো বাদাম নিয়ে পরিমাণ মতো জলে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে জলটা ছেঁকে নিয়ে সংগৃহীত বাদামগুলি বেটে একটা পেস্ট বানিয়ে নিন। এবার সেই পেস্টটা এক গ্লাস গরম দধে মিশিয়ে নিয়ে মিশ্রনটি গরম থাকতে পান করুন। কয়েক সপ্তাহ এই ঘরোয়া ঔষধিটি খেলেই দেখবেন রোগ কমে যাবে।
১০. যোগ-ব্যায়াম:
ভার্টিগোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন মেডিটেশন এবং যোগাসন করতেই হবে। এমনটা করলে দেখবেন জীবনে আর কোনও দিন উঁচু জায়গায় উঠলে কষ্ট হবে না।