নিউজ ডেস্ক:
হালাল জীবিকা মুমিন জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। শারীরিক ও আর্থিক সব ধরনের ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য পূর্বশর্ত হলো হালাল জীবিকা। হালালকে গ্রহণ ও হারামকে বর্জনের মধ্যেই রয়েছে মুমিনের দুনিয়া ও আখিরাত সফলতা। তাই হালাল উপার্জন ও হালাল খাদ্য গ্রহণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম।
পবিত্র কোরআনে হালাল খাদ্য গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানব জাতি! তোমরা পৃথিবী থেকে হালাল ও পবিত্র খাবার খাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করিও না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’। (সূরা বাকারাহ, আয়াত : ২)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘নামাজ শেষ করে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে। ’ (সূরা জুমা : ১০)।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হজরত সাহল বিন আবদুল্লাহ বলেন, তিনটি জিনিসের মধ্যে নাজাত রয়েছে। ১. হালাল খাবার গ্রহণ করা, ২. ফরজসমূহ আদায় করা এবং ৩. নবী করিম (সা.)-এর পূর্ণ অনুসরণ করা। হজরত সাঈদ বিন ইয়াজিদ বলেন, ‘পাঁচটি গুণে ইলমের পূর্ণতা রয়েছে। আর তা হলো আল্লাহকে চেনা, হক বুঝা, আল্লাহর জন্য ইখলাছপূর্ণ আমল করা, সুন্নাহ মোতাবেক আমল ও হালাল খাদ্য গ্রহণ করা। এ পাঁচটির একটিও নষ্ট হলে কোনো আমল আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে না। ’ (তাফসিরে কুরতুবি, ২/২০৮)।
হালাল জীবিকা অর্জনে রসুল (সা.) উৎসাহ দিয়ে বলেন, ‘নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য কেউ কখনো খায় না। আল্লাহর নবী দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন’। (বুখারি, হা/২০৭২)। হালাল রিজিক ভক্ষণ ছাড়া আল্লাহ ইবাদত কবুল করেন না। এ সম্পর্কে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে দেহের গোশত হারাম মালে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম মালে গঠিত দেহের জন্য জাহান্নামই সমীচীন’। (সহিহুল জামে : হা/৪৫১৯)। হুজুর (সা.) আরও বলেন, ‘হারাম দ্বারা পরিপুষ্ট দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না’। (সিলসিলাতুস সহিহা : হা/২৬০৯)।
আমরা যারা নানাভাবে হারামের সঙ্গে জড়িত, আমাদের অবশ্যই কোরআন এবং সহি হাদিসের এ কথাগুলো গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে। হারাম থেকে বেরিয়ে হালালের পথ ধরতে হবে। তা না হলে রসুল (সা.)-এর ঘোষণা অনুযায়ী জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুন ছাড়া আখিরাতের জীবনে আমাদের জন্য আর কিছুই থাকবে না। ইবনে মাজায় বর্ণিত এক হাদিসে রসুল (সা.) বলেন, আল্লাহর নির্ধারিত রিজিক পূর্ণমাত্রায় লাভ না করা পর্যন্ত কোনো জীব-জন্তুই মারা যাবে না। সাবধান! আল্লাহকে ভয় কর এবং বৈধ পন্থায় আয়-উপার্জনের চেষ্টা কর। রিজিক প্রাপ্তিতে বিলম্ব যেন তোমাদের তা উপার্জনে অবৈধ পন্থা অবলম্বনে প্ররোচিত না করে। কেন না আল্লাহর কাছে যা রয়েছে, তা কেবল তার আনুগত্যের মাধ্যমেই লাভ করা যায়। (ইবনে মাজাহ)।
লেখক : ইসলামী গবেষক।